১৫ শতাংশ ভ্যাটের দায় গ্রাহকের নাকি কোম্পানির!
বিদ্যুতেও ১৫ ভাগ ভ্যাট বসানো হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে এই ভ্যাট কার্যকর করতে চায় সরকার। কিন্তু এই ভ্যাট গ্রাহক পর্যায়ে দিতে হবে নাকি বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দিতে হবে তাই নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।
বর্তমানে বিদ্যুতে ৫ ভাগ ভ্যাট দিচ্ছেন গ্রাহকরা। যদি এর পরিমাণ আরো ১০ ভাগ বাড়ানো হয় তাহলে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলও ১০ ভাগ বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এভাবে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বাড়ানো বর্তমান বিদ্যুৎ আইনের পরিপন্থী বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম।
১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বিদ্যুতের ওপর ভ্যাট ৫ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১৫ ভাগ করার প্রস্তাব করেছেন। তবে এটি কোন ক্ষেত্রে কার্যকর হবে তাই নিয়েই চলছে আলোচনা।
শামসুল আলম বলেন, দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ কে অনুসরণ করা হয়। এই আইনে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিতরণ সংস্থাকে কমিশন বরাবর আবেদন করতে হয়। কমিশন আবেদন যাচাই-বাছাই করে গণশুনানির ব্যবস্থা করে। পরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শুধু কোম্পানি বা সংস্থা ব্রেক ইভেন পয়েন্টে (লাভ লোকসানের সমতা বিন্দু) থাকে এই পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়। প্রচলিত আইনে অন্য কোনো পন্থায় বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ নেই।
যদি গ্রাহকের ক্ষেত্রে এই ভ্যাট কার্যকর করা হয়, সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য (এমআরপি) নির্ধারণ করা হবে। ধরা যাক এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা। এক্ষেত্রে ১৫ ভাগ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করে ইউনিটের দাম নির্ধারণ করা হবে ৬ দশমিক ৯ টাকা। গ্রাহকের কাছে বিক্রির আগেই উৎপাদন পর্যায়েই এই ভ্যাট কেটে নেবে এনবিআর। পরবর্তী পর্যায়ে যা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা হবে। এতে গ্রাহকের ইউনিট প্রতি দাম নির্ধারণ করার জন্য বিতরণ কোম্পানিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে যেতে হবে। কিন্তু এখনো বিতরণ কোম্পানিগুলো বিইআরসির সঙ্গে আলোচনাই করেনি। যদিও এনবিআর বলছে এমআরপি নির্ধারণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে তারা এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে যদি কোম্পানি পর্যায়ে এই ভ্যাট যুক্ত করা হয় সেক্ষেত্রে পিডিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, পিডিবি বার্ষিক যে পরিমাণ কর রেয়াত পায় তার পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার মতো। কিন্তু বিদ্যুৎ খাত থেকে ১৫ ভাগ হারে ভ্যাট আদায় করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা। এখানে আরো ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সংকট থাকে। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ লোকসানি পিডিবির পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।