স্বপ্নের স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ
জাতির স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় শনিবার প্রথম প্রহরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহের বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৫ মিনিটে কক্ষপথের দিকে যাত্রার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের স্পেস সোসাইটিতে প্রবেশের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূচনা হলো।
মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্স-এর সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন-৯ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্যাটেলাইটটি নিয়ে কক্ষপথের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করেন। ফ্লোরিডার স্বচ্ছ আকাশে প্রায় সাত মিনিট স্যাটেলাইটটি দেখা যায়।
ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষকারী আইসিটি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমি আজকের দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে চাই, যিনি ১৯৭৪ সালে দেশের সর্ব প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে মহাকাশ যুগে প্রবেশের কার্যক্রমের সূচনা করেন।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রযুক্তি কেন্দ্রীক উত্তরণের দৃষ্টান্ত।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগও যার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন রয়েছে।
দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই উৎক্ষেপণের সরাসরি সম্প্রচার প্রত্যক্ষ করার জন্য মধ্যরাতের পরও সজাগ ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বহু বাংলাদেশীও এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সরাসরি সম্প্রচার ও ওয়েবকাস্ট প্রত্যক্ষ করেন।
শুক্রবার প্রত্যুষে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।
স্পেসএক্স জানায়, রকেট ও স্যাটেলাইট ‘ভাল রয়েছে’ এবং শনিবার উৎক্ষেপণের জন্য এর একাধিক টিমের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তটিও সম্পূর্ণ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ছিল। এ ক্ষেত্রে যে কোন পরিমাপ অস্বাভাবিক হলে উৎক্ষেপণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃত্রিম উপগ্রহের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এর আগে বলেছেন, ফ্যালকন-৯ মহাকাশ যানে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাবে। দু’টি পর্যায়ে এ উৎক্ষেপণে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্যায়ে ১০ দিন ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ দিনের মতো সময় লাগবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাাটির বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশনে এর সংযোগ পেতে আরো কিছুদিন সময় প্রয়োজন হবে।
মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় থেকে উপগ্রহটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং পর্যবেক্ষণে দেশের সক্ষমতা সম্প্রসারিত করবে। উপগ্রহটি থেকে সার্ক দেশগুলোর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাকিস্তানের একটি অংশ এর সুযোগ নিতে পারবে।
এই স্যাটেলাইট প্রথমে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর উৎক্ষেপণের কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইরমার কারণে এর উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ এর ফলে ডাইরেক্ট-টু-হো (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাতসহ দুর্যোগ উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটোয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনায় আরো সহজতর করবে।
বিটিআরসি ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিস কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। কোম্পানিটি কয়েক মাস আগে স্যাটেলাইটটির তৈরির কাজ সম্পন্নের পর এটি ফ্রান্সের ক্যানেস ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। পরে ২৯ মার্চ এ স্যাটেলাইট ফ্লোরিডায় স্থানান্তর করা হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারস্পুটনিক’ এর কাছ থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় (স্লট) কক্ষপথ স্লট ক্রয় করে।