বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিদায় নিচ্ছে ‘সকার’

 

বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিদায় নিচ্ছে আজারবাইজানের কোম্পানি ‘সকার (স্টেট অয়েল করপোরেশন অফ আজারবাইজান)’। এর ফলে দেশের পিছিয়ে পড়া নিজস্ব গ্যাস আহরণের কার্য়ক্রম আরও একটু পিছিয়ে গেল।

বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সকারের তিনটি কূপ খননের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন সময় নিয়ে মাত্র একটি কূপ (খাগড়াছড়ির সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্রে) খনন করেছে। সেখানে অবশ্য গ্যাস পাওয়া যায়নি। এরপর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জে দুটি কূপ খননের কথা ছিল।

কয়েকবছর আগে ‘সকার’ যখন বাপেক্সকে তিনটি কূপ খননের প্রস্তাব দেয় তখন সেটি সরকারি-বেসরকারি কোনো কোনো মহলে ব্যাপক আলোচনা ও প্রশংসার বিষয় হয়েছিল। এর একমাত্র কারণ এদেশে কর্মরত অন্যান্য বিদেশি কোম্পানির তুলনায় সকারের চুক্তিমূল্য ছিল দৃশ্যত কম।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অন্যান্য বিদেশি কোম্পানি যেখানে প্রতিটি কূপের জন্য গড়ে ১৬০ কোটি ডলার দাম ধার্য় করে, সেখানে সকার দাম ধরেছিল মাত্র ১১০ কোটি ডলার। ওই দামে যখন বাপেক্স সকারের সঙ্গে চুক্তি করে তখন অভিজ্ঞ মহলের অনেকে বলেছিলেন যে, এই দামে কোনো বিদেশি কোম্পানির পক্ষে কূপ খনন করা সম্ভব নয়।

অবশ্য চুক্তি বাতিল করার আবেদনে এর কারণ হিসেবে সকার তাদের বিল পরিশোধে বিলম্বের অজুহাত দেখিয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এটি নিছকই অজুহাত। সরকারি প্রক্রিয়ার কারণে অনেক কোম্পানির বিল পরিশোধেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিলম্ব হতে পারে। সেটা দুই পক্ষই বোঝে এবং সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হান্নান বিল পরিশোধে কিছুটা বিলম্বের কথা স্বীকার করে বলেন, সেমুতাং কূপের জন্য সকারকে ১১০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বেগমগঞ্জ কূপটি খননের প্রস্তুতিমূলক কিছু কাজের জন্য সকার আরও ৫০ কোটি ডলার দাবি করেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চুক্তি বাতিল করে চলে যাওয়ার আগে সকার বেগমগঞ্জ কূপের প্রস্ততিমূলক কাজের জন্য যে ব্যয় দাবি করেছে তার কতটা তাদের প্রাপ্য তা অবশ্যই হিসাব করে দেখতে হবে। তাছাড়া, সেমুতাং কূপটি খননের জন্য তাদের সময় নির্ধারিত ছিল ১২০ দিন। কিন্তু লাগিয়েছে প্রায় ২৫০ দিন। কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতিও তারা সরবরাহ করতে পারেনি। খননযন্ত্রের (রিগ) ‘টপ ড্রাইভ’সহ কিছু কিছু অপরিহার্য় যন্ত্রপাতি বাপেক্স তাদের সরবরাহ করেছে। এখন এসব বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেনা-পাওনার হিসাব চূড়ান্ত করতে হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলেন, সেমুতাং একটি চলমান গ্যাস ক্ষেত্র। সেখানে অন্য কূপ থেকে গ্যাস তোলা হচ্ছে। এ রকম একটি ক্ষেত্রে কূপ খনন করে গ্যাস না পাওয়ার ঘটনা প্রায় অস্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও কেন গ্যাস পাওয়া গেল না, এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটির কাজে কোনো কারিগরি ত্রুটি ছিল কিনা এসবও খতিয়ে দেখতে হবে।

ওয়েভসাইটে সকারের কার্য়ক্রম সম্পর্কে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কূপ খননকার্যে কোম্পানিটির রেকর্ড তেমন ভাল নয়। কাস্পিয়ান সাগরে কূপ খনন করতে গিয়ে তিন বছরে (২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬) সকার পাঁচটি দুর্ঘটনা (ব্লো-আউট) ঘটিয়েছে। এতে তাঁদের কয়েকজন কর্মী মারা গেছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সকার কাজ করতে না চাওয়ার ফলে যে শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য মাদারগঞ্জে বাপেক্সই কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। বেগমগঞ্জ কূপের বিষয়েও শিগগিরই সিদ্ধন্ত হবে।