যেভাবে ইউরেনিয়াম কিনবে বাংলাদেশ: আগামীকাল চুক্তি
আন্তর্জাতিক বাজার দরে ইউরেনিয়াম কিনবে বাংলাদেশ। পাবনার রূপপুর পরমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য ইউরেনিয়াম কিনতে নিদির্ষ্ট কোন দাম নির্ধারণ করা হবে না। একটা নিয়ম ঠিক করা হচ্ছে। সেই নিয়ম অনুযায়ি আন্তর্জাতিক বাজার দরের সাথে মিল রেখে সময় সময় এই দাম নির্ধারণ করা হবে। কখনও বাড়বে কখনও কমবে।
রাশিয়া রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য আজীবন ইউরেনিয়াম বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ করবে। আগামীকাল রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি হবে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়া আন্তঃরাষ্ট্র সহযোগিতা চুক্তির আওতায় এই চুক্তি হবে।
বিজ্ঞান সচিব আনোয়ার হোসেন এনার্জি বাংলাকে বলেন, রাশিয়াই যেহেতু কেন্দ্র স্থাপন করছে সেজন্য ইউরেনিয়ামও তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ¯^ার্থ বজায় রেখে এই চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক সকল পর্যায় শেষ হয়েছে।
আনুমানিক ২০২৭ সাল থেকে বাংলাদেশের এই জ্বালানি প্রয়োজন হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার পর প্রথম দুই বছরের জ্বালানি সরবরাহের চুক্তি আগে করা হয়েছে। প্রথম দুই বছর ব্যবহারের পর যখন নতুন জ্বালানি প্রয়োজন হবে তখনই এই আমদানি করা জ্বালানি লাগবে। আর তার জন্য এখনই চুক্তি করা হচ্ছে।
জ্বালানি বা ইউরেনিয়াম সরবরাহ করবে রাশিয়ার টিভিইএল ফুয়েল কোম্পানি। এই কোম্পানির মনোনীত ঠিকাদার ‘জেএসসি এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট’ জ্বালানি সরবরাহ করবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিটে একবার ইউরেনিয়াম বা জ্বালানিতে আনুমানিক ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ৫২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। আগামী ৫০ বছরে ইউরেনিয়ামের জন্য বাংলাদেশের প্রায় ১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিটে প্রতি ১৮ মাস পরপর জ্বালানি পরিবর্তন করতে হবে। এই দাম বাজারদর অনুযায়ি সময় সময় পরিবর্তন হবে।
ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার এজেন্সি আগামী ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রতি কিলোগ্রাম ইউরেনিয়ামের দর নির্ধারণ করেছে ৫৫০ ডলার। চুক্তির খসড়া অনুযায়ি বছরে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ হারে দাম বাড়বে।
খনি থেকে তোলা ইউরেনিয়াম আন্তর্জাতিক বাজারে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। জ্বালানি কেনার আদেশ দেয়ার আগে ইউরেনিয়ামের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে ৫০ শতাংশ এবং ডলার ও ইউরোর বার্ষিক অবমূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে ৫০ শতাংশ ধরে পূর্বমূল্য ঠিক করা হবে। এ ¶েত্রে ডলার ও ইউরোর বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হারও বিবেচনায় নেয়া হবে।
জ্বালানি বা ইউরেনিয়াম সরবরাহের সময় বিশ্ববাজারে যে দর থাকবে সেই অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হবে। প্রতি ১০ বছর পরপর দর পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্র্নিধারণ করা হবে। এ ছাড়া পরমাণুর জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে ¯^ীকৃত ‘অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ এর প্রকাশিত ‘দি ইকোনমিক অব নিউক্লিয়ার ফুয়েল সাইকেল’ ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, ১৯৯৪- এর পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
বিজ্ঞান সচিব বলেন, চুক্তিতে ইউরেনিয়ামের কোন দাম নির্ধারণ করা হবে না। তবে একটা নিদির্ষ্ট নিয়ম ঠিক করা হবে। যেটা আন্তর্জাতিকভাবে ¯^ীকৃত। ইউরেনিয়াম ক্রেতা দেশগুলো এই নিয়ম মেনেই চলে। যখন বাজারদর যেমন থাকবে তখন সেই বাজার দরে নেয়া হবে। এটা আইএইএ এর নির্দেশনা মেনে করা হয়েছে। যেহেতু দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি তাই এখনই পাঁচ বছর, দশ বছর বা আরও পরের দাম নির্ধারণ করা ঠিক হবে না। মুদ্রাস্ফিতি বা মুদ্রাসংকোচনের উপর নির্ভর করে দাম ঠিক হবে।
ইউরেনিয়াম ব্যবহারের পর যে বর্জ্য তা রাশিয়া নিয়ে যাবে। তবে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ আসবে ব্যবহারের অনন্ত দশ পর পর। জ্বালানি ব্যবহারের পর তা ঠাণ্ডা বা ¯^াভাবিক প্রক্রিয়ায় আনতে মাটির নিচে পুতে রাখা হবে। ঠাণ্ডা হতে প্রায় দশ বছর লাগবে। এরপর তা রাশিয়া নিয়ে যাবে।
রাশিয়ার সাথে ইউরেনিয়াম সরবরাহের যে চুক্তি হচ্ছে তা আইন মন্ত্রনালয়ে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে পর্যালোচনা করে পাঠানো হয়েছে। এরআগে জুন মাসে অর্থনৈতিক ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে খসড়া চুক্তিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এখানে দুটো বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ২০২২ সালে প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র এটাই প্রথম। অর্থনৈতিক দিক থেকে এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে খরচ হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকি টাকা বাংলাদেশের প¶ থেকে যোগান দেয়া হবে।