ঘূর্ণিঝড় বুলবুল: ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি

bulbul cyclon

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে চার থেকে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ঝড়ে চারজনের মৃত্যুর খবর দিলেও প্রতিমন্ত্রী দুইজনের মৃত্যুর কথা বলেছেন।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, “অফিসিয়ালি দুইজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। একজন দাকোপের প্রমিলা এবং আরেকজন পটুয়াখালীর হামিদ কাজি। যদিও সংবাদ মাধ্যমে চারজনের কথা বলা হচ্ছে। ৩০ জনের মত আহত হয়েছে এবং চার থেকে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।”

ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সফল হয়েছিলাম। পাঁচ হাজার ৭৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জনকে নিরাপত্তা দিতে পেরেছি।”

প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৪টি জেলায় চার নম্বর সতর্ক সংকেত পাওয়ার সাথে সাথে চাল ও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই এ সহযোগিতা আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর রাখার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ৪০ থেকে ৯০ কিলোমিটার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা আসলে খুবই কম। সিডর বা আইলায় গতিবেগ ছিল ২২০ থেকে ২৫০ পর্যন্ত।

“ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে। এরপর সাতক্ষীরা-খুলনা-বাগেরহাট হয়ে এখনও এটি বাংলাদেশ রয়েছে, বিকাল নাগাদ শেষ হয়ে যাবে।

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “যেকোনো দুর্যোগে স্থায়ী কার্যাদেশ রয়েছে এসওডি অনুযায়ী দুর্যোগ সরে যাওয়ার সাথে সাথে মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা সেই স্থান পরিদর্শন করবে। সেই অনুযায়ী আগামীকাল পরিদর্শনে যাওয়া হবে।
“এছাড়া জেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের কাছে থেকে রিপোর্ট আসা শুরু হয়েছে, সেখান থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা করে যার যার মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেব।”

ফসলের কি ধরণের ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পটুয়াখালী ছাড়া অন্য কোনো জেলায় আমন নেই, তবে শীতের সবজি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ক্ষতি নিরূপণ করার পর সেখানে সহযোগিতা করা হবে।”

জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির সর্বশেষ হিসাব তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সাতক্ষীরায় কাচাঁঘরবাড়ি, খুলনায় গাছপালা, বাগের হাটে কাঁচাঘর ও টিনের ঘর, ভোলার লালমোহনে ৫-৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝালকাঠিতে কিছু ধানের জমি, বরিশালে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।”

“বরগুনায় একটি স্কুলের চাল উড়ে গেছে, পটুয়াখালীতে ৮৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ফেনী, পিরোজপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। খুলনা বিভাগে ক্ষতি হয়েছি। অন্যান্য জেলায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।

ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব আসতে কমপক্ষে সাতদিন সময় লাগবে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল বলেন, জেলা প্রশাসকদের আনুমানিক হিসাবে চার থেকে পাঁচ হাজার কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুন্দরবনের জন্য রক্ষা

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “বুলবুল পশ্চিম বাংলায় আঘাত করার পর সুন্দরবনে আঘাত করেছে এবং সুন্দরবন আমাদের প্রটেকশন, সেটা ঝড়টাকে আরও দুর্বল করার পর উপকূলের জেলাগুলোতে গেছে। ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার প্রকৃত গতিবেগ নিয়ে সরাসরি বাংলাদেশ আঘাত হানলে ভয়াবহতা আরও বেশি হত। বিপদ সংকেত যা দেওয়া হয়েছিল তা সঠিক ছিল।”

তিনি বলেন, “সুন্দরবন সবুজ বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে। এটির ওপর অনেক অত্যাচার হয়। এখানে আরো গাছ লাগিয়ে আরও সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

প্রভাব কাটতে আরও দুদিন

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, বর্তমানে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত রাখা হয়েছে কারণ এখনও বিভিন্ন স্থানে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হচ্ছে।

আবহাওয়া আগামী দুইদিনের মধ্যে অনুকূল হতে থাকবে এবং ৩ নম্বর সংকেত নামিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান শামসুদ্দিন।