বিদ্যুৎ গ্যাস ও তেলের চাহিদা কমেছে
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও জ্বালানির ব্যবহার কমেছে। বিদ্যুৎ গ্যাস তেল সব কিছুরই চাহিদা কমেছে। শিল্প বন্ধ। চলছে না যানবাহনও। জ্বালানির যা ব্যবহার তার প্রায় পুরোটা আবাসিকে। তাই জ্বালানির ব্যবহার কমেছে মাত্রাতিরিক্ত।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমেছে ৬০ শতাংশ। তবে আমদানি স্বাভাবিক আছে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ। আর বোতল গ্যাসের ব্যবহার করেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। বোতল গ্যাসের ব্যবহার মফস্বল শহওে কমেছে বেশি।
জ্বালানি তেল বিক্রি কমেছে ৬০%
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমেছে গড়ে ৬০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে জেট ফুয়েলের ব্যবহার ১০০ শতাংশ কমেছে। এতে জ্বালানি তেলের মজুত বাড়ছে। অপরদিকে পণ্যটির সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য কর্মী সুরক্ষা নিশ্চিত করে ডিপোগুলো চালু রেখেছে বিপিসি। পাশাপাশি আমদানিও অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, দেশের শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও পরিবহন খাতে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা আছে। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টন অর্থাৎ, প্রায় ৭৫ শতাংশ। এ হিসেবে প্রতিদিন দেশে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার টন। অথচ গত ২৪ শে মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত চলমান সাধারণ ছুটিতে বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার টন। অর্থাৎ, করোনার প্রভাবে শুধু ডিজেলের চাহিদা কমেছে প্রায় ৬৭ শতাংশ।
আর জেট ফুয়েলের চাহিদা ও ব্যবহার কমেছে ১০০ শতাংশ। সাধারণত প্রতিদিন এভিয়েশন খাতে গড়ে এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২৫০ টন জেট ফুয়েল লাগে। আর প্রতি মাসে ৩৪ হাজার থেকে ৩৯ হাজার টন এবং বছরে চার লাখ ১০ থেকে সাড়ে চার লাখ টন চাহিদা।
শুধু এ দুই ধরনের জ্বালানি পণ্যই নয়, একইভাবে কমেছে অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিন, ফার্নেসসহ অন্যান্য জ্বালানি পণ্য। তবে বিক্রি কমলেও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন।
জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত মজুত বাড়ানো হয়েছে। ডিপোগুলো একদিন বন্ধ ও একদিন চালু এ নীতিতে পরিচালনা করা হচ্ছে। আগে তেল নেওয়ার জন্য এক সঙ্গে তিনজন ডিপোতে ঢুকতে পারত। এখন শুধু চালক প্রবেশ করতে পারেন।
বিপিসি পেট্রোল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল, জেবিও, লুব অয়েল, এসবিপি, এমবিপি, এলপিজি, বিটুমিন, ডিজেল, জেট এ-১, অকটেন ও এলডিও সরবরাহ করছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিপিসি’র মোট জ্বালানি পণ্যের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯৭ টন, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬৯ লাখ ৪৮ হাজার ৩৩৬ মেট্রিক টন।
বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে
বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ। এই এপ্রিলে গড়ে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় অর্থাৎ সন্ধ্যার সময় বিদ্যুতের চাহিদা আছে ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর গত বছর এসময় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার মেগাওয়াট। দিনের বেলা কম চাহিদার সময় গতবছর ব্যবহার হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এবার এখন লাগছে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। ২০১৯ সালের ১৮ই এপ্রিল সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৫ মেগাওয়াট। আর এখন ১৯শে এপ্রিল সন্ধ্যায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৫৫ মেগাওয়াট। গতবছর দিনের বেলা হয়েছে ৮ হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট। আর এবছর ১৯শে এপ্রিল একই সময়ে হয়েছে ৬ হাজার ৭২৩ মেগাওয়াট।
গ্যাসের চাহিদা কমেছে
গ্যাসের চাহিদা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। গতবছর এসময় গড়ে গ্যাস প্রয়োজন ছিল ৩০০ কোটি ঘনফুট। এখন গড়ে ব্যবহার হচ্ছে ২০০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎ আর আবাসিক প্রয়োজনে গ্যাসের ব্যবহার স্বাভাবিক থাকলেও শিল্প ও বাণিজ্য চাহিদা কমেছে। কিছু শিল্প চললেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রায়সবই বন্ধ। তাই গ্যাসের ব্যবহার কমেছে। এদিকে রান্নায় বোতল গ্যাসের চাহিদা কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। বিশেষ করে মফস্বল শহরে।