ভারতে কয়লা খনিতে বিদেশী বিনিয়োগ না আনতে মোদিকে মমতার চিঠি

‌’ভারতে কয়লা খনিতে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ, তাই কয়লা শিল্পে এফডিআই চালুর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন’, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে এই অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কেন্দ্রের ঘোষিত কয়লা শিল্পে ১০০ শতাংশ এফডিআই নীতি সম্পর্কে মমতা বলেন,”এই নীতি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আনতেও পারবে না বা তেমন কোনও প্রযুক্তিও আনতে পারবে না, যা বর্তমান সময়ে ব্যবহার করা যায়। কারণ সাম্প্রতিক প্রবণতা বিচার করলে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ঝোঁক কয়লা খনি শিল্পের বদলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদনের দিকেই। তাছাড়া সমীক্ষা বলছে, প্রায় ১০০টি বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থা তাদের কয়লা বিনিয়োগ পরিত্যাগ করেছে। তাই কয়লায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছুই নয়।” ১৮ই জুন কয়লা খনিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্যে ৪১টি কয়লা ব্লকের ভার্চুয়াল নিলামের সূচনা করেন নরেন্দ্র মোদি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, বর্তমানে ভারতের ৮০ শতাংশ কয়লা উত্তোলন হয় যে সংস্থার হাত ধরে, সেই কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড একটা লাভজনক সংস্থা এবং ২০১৮–১৯–এ আয়কর দিয়েও তাদের ২৭০০০ কোটি টাকা লাভ ছিল। সিআইএল–এর ৩১,০০০ কোটি টাকা শুধু রিজার্ভেই আছে। ফলে কয়লা শিল্পে এফডিআই চালু করা মানে এই দেশীয় সংস্থার যোগ্যতার অপমান।

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে লেখেন, কয়লা খনির মতো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যা দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটা বড় অবদান রাখে, তাকে এভাবে বেসরকারিকরণ করে কোনওভাবেই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তোলা যাবে না। কারণ, দুটি ভাবনা পরস্পর বিরোধী। এর ফলে দেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে তাঁর চিঠির মাধ্য়মে আরও আবেদন করেন যে, কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের কলকাতার শাখা অফিসগুলি তারা যেন না তুলে নেয় সেব্যাপারে ‌হস্তক্ষেপ করে কয়লা মন্ত্রককে যেন পরামর্শ দেন মোদি। কারণ হিসেবে মমতা বলেছেন, দেশের ৮০ শতাংশ কয়লা পাওয়া যায় পূর্ব ভারতের অঞ্চলেই। সেজন্যই কলকাতায় এই কোম্পানির সদর দপ্তর রয়েছে। কিন্তু এর শাখা অফিস— ভারত কোকিং কোল লিমিটেড, সেন্ট্রাল কোলফিল্ডস্‌ লিমিটেড, সাউথ ইস্টার্ন কোলফিল্ডস্‌ লিমিটেড এবং মহানদী কোলফিল্ডস্‌ লিমিটেডের অফিস কলকাতা থেকে তুলে নিয়ে গেলে কয়লা শিল্পের লগ্নিকারীরা এবং কর্মীদের পক্ষেও নিরুৎসাহজনক হবে।

এর সঙ্গেই কোভিড–১৯ মহামারীতে কেন্দ্রের জারি করা সুরক্ষা বিধিও কর্মীদের জন্য জড়িত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সময় কয়লা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের এক শহর থেকে অন্য শহরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অমানবিক, একথাও বলেন মমতা।