করোনায় বন্ধ হয়নি রূপপুরের কাজ, ৩০ ভাগ শেষ
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও থেমে নেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরোদমে চলছে এর কর্মকাণ্ড। সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ। নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদনে আনতে বাড়ানো হচ্ছে বিদেশি জনবলও।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, লকডাউন শুরুর পর পরিবহন ও আমদানিতে প্রাথমিকভাবে একটু সমস্যা হলেও তা দ্রুত সমাধান হয়েছে।
প্রথম রিঅ্যাক্টর ভবনের কনটেইনমেন্ট ওয়াল দৃশ্যমান। ঢালাই কাজ অব্যাহত রাখতে অতিরিক্ত শ্রমিক নেয়া হয়েছে। এ বছর প্রথম রিঅ্যাক্টর বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হবে। একইভাবে অন্য যন্ত্রগুলো স্থাপন করা হবে। প্রথম রিঅ্যাক্টর ইউনিটের সব যন্ত্রপাতি এ বছর আসবে। আগামী বছর দ্বিতীয় বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। রাশিয়ায় এসব যন্ত্র তৈরি হচ্ছে।
করোনার মধ্যেই রূপপুরের রূপপুর দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়্যাক্টর বিল্ডিং-এ ‘সাপোর্ট ট্রাস’ স্থাপন করা হয়েছে। সাপোর্ট ট্রাস একটি ধাতব কাঠামো। যার অনেক রেডিয়াল বিম রয়েছে। এটি রিয়্যাক্টর পিট যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর কাজ রিয়্যাক্টর ভেসেলকে ভূমিকম্পসহ যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা। এটি রিয়্যাক্টরের পুরো কার্যকাল, অর্থাৎ ৬০ বছরের বেশি সময় উচ্চতাপ ও রেডিয়েশন সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।
দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপনের সহায়ক অবকাঠামো শেষ হয়েছে। এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর (পড়হঃধরহসবহঃ) উচ্চতা হবে হবে ৬১ দশমিক ৭ মিটার। এরমধ্যে দুই ধাপে ২০ মিটার শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে এগিয়ে চলছে বাইরের কাঠামো নির্মাণ (পড়হঃধরহসবহঃ ) কাজ। এটির উচ্চতা হবে ৬৪ দশমিক ৫ মিটার।
মাটির নিচে ৩০ মিটার কাঠামোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। স্থাপিত হয়েছে কোর ক্যাচার। বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই কোর ক্যাচার।
রূপপুরের রিয়্যাক্টরসহ সব যন্ত্রপাতি নির্মাণ করা হচ্ছে রাশিয়াতে। রাশিয়া থেকে আসার পর চলতি বছরেই প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর স্থাপন কাজ শুরু হবে।
রূপপুর প্রকল্প এলাকায় করোনা সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে কাজ হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও মহামারী নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধি অনুসরণ করা হচ্ছে।কর্মীদের প্রতিদিন তাপমাত্রা মাপা। কারো তাপমাত্রা বেশি থাকলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো। আর সুস্থ নিশ্চিত
হলেই তাকে কাজ করতে দেয়া। কাজের মধ্যেও তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ান উভয়ের আলাদা চিকিৎসক আছেন। তারা সবসময় পর্যবেক্ষণে রাখছেন।
সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানতে ২৪ ঘণ্টার জন্য সূচি করে কর্মীদের আলাদা দল করে দেয়া হয়েছে। ক্যান্টিনে খাওয়ার সময়ও দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে।
যদি কেউ অসুস্থ হয় তবে ওই শিফটের সবার কাজ বন্ধ রাখা হচ্ছে এবং তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। নতুন গ্রুপ করে ওই শিফট আবার চালু করা হচ্ছে।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর এনার্জি বাংলাকে বলেন, কাজের গতি আগের থেকে বাড়িয়েছি। রিঅ্যাক্টর ভবনের নির্মাণ কাজ এগিয়ে আছে। সব কাজ ঠিকঠাক মতই চলছে। অবকাঠামোগত ৩০ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৭ শতাংশ। তিনি বলেন,
মহামারীতে অবরুদ্ধ অবস্থার সময় পরিবহন ও আমদানির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হলেও কাজের ক্ষেত্রে তা বড় প্রভাব ফেলেনি। কোয়ারেন্টিনের জন্য আলাদা আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসলে তার করোনাভাইরাস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।
এ পর্যন্ত ৭৮ জন রুশ বিশেষজ্ঞ দেশে ফেরত গেছেন। অন্যদিকে তিনটি চার্টার্ড ফ্লাইটে রাশিয়া থেকে এসেছেন ৫৭০ জন। আরও ১১ জন এসেছেন জার্মানি থেকে। ৮১ জন ভারতীয়কে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। জুলাই এবং অগাস্টে আসবেন আরও প্রায় ৭৫০ জন রুশ বিশেষজ্ঞ। প্রতিদিন প্রায় আট হাজার জন এখানে কাজ করছেন। এরমধ্যে ১ হাজার ৮০০ জন আছেন রাশিয়ান।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল স্থাপনা নির্মাণ করছে রাশিয়ার অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। ২০২৩ সালের মধ্যে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের আবাসনের জন্য যে গ্রিন সিটি করা হচ্ছে, সে কাজ সময়মত শেষ করার জন্য মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।