বাংলাদেশের ‘কানেক্টিভিটিতে’ আগ্রহ নেপালের
বিডিনিউজ:
বৈদেশিক বাণিজ্য সহজ করতে বাংলাদেশের তিন সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি আকাশ, রেল ও নৌপথ ব্যবহারের আগ্রহ দেখিয়েছে নেপাল।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারীর ঢাকা সফরে আলোচনার বড় অংশ জুড়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহারের বিষয়গুলো ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে সোমবার দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন নেপালের প্রেসিডেন্ট।
সোমবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও নেপালের প্রেসিডেন্ট ভাণ্ডারীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
ওইদিন বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের আয়োজনে যোগ দেওয়ার আগে নেপালের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পর্যটন, স্যানিটেশন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রেল ট্রানজিটের বিষয়ে একটি ইনস্টুমেন্টও রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ১৯৭৬ সালে সম্পাদিত নেপাল-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তির প্রটোকলের সংযোজনী হিসেবে রোহানপুর-সিংঘাবাদ রেল সংযোগ পয়েন্টকে অন্তর্ভুক্ত করে দুই দেশের বাণিজ্য সচিবদের মধ্যে একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জ (এলওই) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
“নেপাল চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। এক্ষেত্রে মডালিটিগুলো নির্ধারণের কাজ এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।”
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পাশাপাশি নেপাল সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট এবং নেপালের বিরাটগর বা ভদ্রপুরের মধ্যে সরাসরি বিমান সংযোগ স্থাপনেও আগ্রহী জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ প্রস্তাব দুটিকে স্বাগত জানিয়েছে।”
মোমেন বলেন, “২০১৫ সালে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিবিআইএন মোটর ভেহিকেলস এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান রুটগুলো ছাড়াও নতুন কিছু রুট অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
”চুক্তিটির ত্রিদেশীয় প্যাসেঞ্জার প্রটোকল স্বাক্ষরে বাংলাদেশ ও ভারত ইতোমধ্যে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে নেপালের সম্মতি খুব দ্রুত পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।”
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “আমরা নেপাল এবং ভারতের নীতিগত সম্মতি পেয়েছি। সত্যিকার অর্থে ইন্সট্রুমেন্টটা স্বাক্ষর করার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন।
”কিন্তু ভুটানের পার্লামেন্ট এটাকে এখনো অনুমোদন করেনি। এ কারণে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি দেশের মধ্যে এটা নিয়ে কাজ করছি, ভুটান পরেও যোগ দিতে পারে।”
নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের বিষয়টি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “এটি স্বাক্ষরিত হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করছি, চুক্তিটি দ্রুতই স্বাক্ষরিত হবে।”
প্রেসিডেন্ট ভাণ্ডারী নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মোমেন।
তিনি বলেন, জলবিদ্যুতের ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় সচিব পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ বিষয়ক কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে জলবিদ্যুৎ সেক্টরে বর্ধিত সহযোগিতার আশাবাদ জানিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশকে সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেইটওয়ে তথা মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি হাবে রূপান্তরিত করতে চায় সরকার। এজন্য ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী নেপালের সাথে বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত পরিবহন-সংযোগ অবারিত ও সুগম করার নানাবিধ উদ্যোগ চলমান রয়েছে।”
সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে ধানমণ্ডিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান নেপালের প্রেসিডেন্ট ভাণ্ডারী। বিকালে বারিধারায় নেপাল দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দেশের পথে রওনা করেন তিনি।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফী বিনতে শামস উপস্থিত ছিলেন।