বড়পুকুরিয়া খনির কয়লার দাম বাড়ছে
রফিকুল বাসার:
বড়পুকুরিয়া খনির কয়লার দাম বাড়ছে। নতুন চুক্তিতে প্রতিটনে প্রায় ৯ ডলার করে বাড়ছে। দাম বাড়িয়েই নতুন করে চুক্তি করা হচ্ছে।
চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি এবং সিএমসি গঠিত কনসোর্টিয়ামের সাথে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লি. আবার এই চুক্তি করতে যাচ্ছে।
ছয় বছরের জন্য নতুন করে চুক্তি হবে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি এতে অনুমোতি দিয়েছে। আর এই চুক্তির পরেই আবার শুরু হবে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন।
জ্বালানি বিভাগের জৈষ্ঠ সচিব আনিছুর রহমান এনার্জি বাংলাকে বলেন, ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের পর দ্রুত সময়ে চুক্তি করা হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা তুলতে প্রতিটনে এখন ৮১ ডলার করে দিতে হয়। নতুন চুক্তিতে এই খরচ ৯০ ডলার নির্ধারণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি টনে ৯ ডলার করে বেড়ে যাচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান এ বিষয়ে এনার্জি বাংলাকে বলেন, আগের চুক্তির সময় আর এখনকার সময়ের মধ্যে বাজার দর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দরকষাকষি করে সর্বোচ্চ কম দাম নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদনের পর চুক্তি হবে। আর চুক্তির পরেই আবার তোলা শুরু হবে কয়লা।
চুক্তির পর আবার শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনা হবে বলে তিনি জানান।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় খনি থেকে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা তোলা শুরু করা হয় ২০০৫ সালে। প্রথম থেকেই কয়লা তুলতে চীনা ঠিকাদারি কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে আবার নতুন করে চুক্তি করা হয়েছে। এভাবে গত ১৫ বছরে কয়েকবার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ২০০৫ সালে প্রথম চুক্তি হয়। এরপর ২০১১ সালে তারপর ২০১৭ সালে। ২০২১ সালের ১০ই আগস্ট শেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। প্রথমে বছরে ১০ লাখ টন কয়লা তোলার চুক্তি করা হয়।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২৫ শে জুলাই থেকে কয়লা তোলা বন্ধ করে দেয় চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
খনি এলাকায় প্রায় তিন লাখ টন কয়লার মজুত ছিল। তা দিয়েই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালছে। মজুদ কয়লা শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।
এখন খনির যে স্তর থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে, অর্থাৎ ১৩১০ ফেইজ থেকে কয়লা তোলা হবে। সেখানে আরও এক থেকে দেড় লাখ টনের মতো কয়লা মজুদ আছে। পরে নতুন ফেইজ ১৩০৬ থেকে কয়লা তোলা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) ১৯৮৫ সালে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া এলাকায় ৬ দশমিক ৬৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১১৮ থেকে ৫০৯ মিটার গভীরতায় উন্নতমানের বিটুমিনাস কয়লার সন্ধান পায়।
২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা তোলা হয়। পরে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫৫ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা তোলা হয়।
খনির শুরু থেকে মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত মোট এক কোটি দুই লাখ মেট্রিক টন কয়লা তোলা হয়েছে।
বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম লং ওয়াল মাইনিং পদ্ধতি থেকে পরিবর্তন করে ২০১৩ সাল থেকে লংওয়াল টপ কোল কেভিং (এলটিসিসি) পদ্ধতিতে তোলা শুরু হয়। এই পদ্ধতির ফলে খনির কয়লা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। বড়পুকুরিয়ার ১২১০ ফেইসে প্রথম এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬টি ফেইস থেকে সম্পূর্ণ এবং ২টি ফেইস থেকে আংশিকভাবে কয়লা তোলা হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কয়লা তোলা হচ্ছে।