আরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে বিশ্ব: জাতিসংঘ
বিডিনিউজ:
চলতি মাসের শেষে অনুষ্ঠিত হতে চলা গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলনের আগেও বিশ্বের বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো এখনও বিশ্ব ঊষ্ণায়ন নিরাপদ মাত্রায় রাখার কথা না ভেবে আগামী কয়েকবছরে এই জ্বালানি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ‘ইউএনইপি’র প্রোডাকশন গ্যাপ রিপোর্ট বলছে, বিশ্ব ঊষ্ণায়ন নির্ধারিত নিরাপদ সীমার মধ্যে রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রা যতটুকু থাকা প্রয়োজন তার দ্বিগুণেরও বেশি জ্বালানি আহরণের পরিকল্পনা করেছে বিশ্বের দেশগুলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৫ টি প্রধান জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ ২০৩০ সাল নাগাদ কয়লা, তেল ও গ্যাস মিলিয়ে মোটামুটি ১১০ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন করবে।
কেবল কয়লা উৎপাদন সামান্য একটু কমলেও তেল এবং গ্যাস উত্তোলন একলাফে অনেক বেড়ে যাবে, বলছে জাতিসংঘ প্রতিবেদন।
আগের আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব ঊষ্ণায়ন রোধে দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আর দেশগুলোর সরকার এখন আরও বেশি হারে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর যে পরিকল্পনা করছে- এ দু’য়ের মধ্যকার অসামঞ্জস্যকেই গবেষকরা বলছেন ‘প্রোডাকশন গ্যাপ’।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এর আগে ২০১৯ সালে প্রথম যে বার্ষিক প্রোডাকশন গ্যাপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল তার তুলনায় এবারের প্রতিবেদনে বলতে গেলে পরিবর্তন হয়নি কিছুই।
আগামী জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬ শুরু হতে আর মাত্র কিছুদিন বাকী। তার আগে দিয়ে বিশ্বের বড় বড় গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরনকারী দেশগুলো কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কতদূর এগিয়েছে সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
কিন্তু অনেক দেশেরই গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ শুন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরির পরও দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল, গ্যাস এবং কয়লা উৎপাদনকারী কয়েকটি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি দ্রুত কমিয়ে আনার কোনও পরিকল্পনাই করেনি।
অথচ এই পরিকল্পনা করাটা আগামী কয়েক বছরে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির রাশ টেনে ধরার জন্য খুব জরুরি বলেই অভিমত বিজ্ঞানীদের।
এ বছরের শুরুর দিকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ইন্টারগভমেন্টাল প্যানেল আইপিসিসি’র গবেষকরা এ শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যাওয়ার বিপজ্জনক পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
২০১৫ সালের প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে ১৯০ টিরও বেশি দেশ বৈশ্বিক তাপমাত্রা এই সীমার মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গেলে, র্অর্থাৎ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এই সীমার মধ্যে রাখতে গেলে কার্বন নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ কমানো প্রয়োজন।
কিন্তু জাতিসংঘ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এর উল্টো চিত্র। বেশির ভাগ দেশের সরকারি নীতিতে এখনও জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঊষ্ণায়ন সীমিত রাখতে হলে অবিলম্বেই কয়লা, গ্যাস এবং তেল উৎপাদন কমতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশ এখনও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর হলেও আশার কথা এই যে, সম্প্রতি বেশকিছু দেশ এরই মধ্যে এই জ্বালানিতে অর্থায়ন করা অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে।
তারপরও সদ্য প্রকাশিত “জাতিসংঘ প্রতিবেদনটি আরও একবার এই কঠিন সত্যকেই সামনে নিয়ে এসেছে যে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আমাদের মাটির নিচে থেকে তেল, গ্যাস উত্তোলন বন্ধ করা দরকার,” বলেছেন কোস্টা রিকার পরিবেশ ও জ্বালানিমন্ত্রী আন্দ্রে মেজা।