নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর ২৩ বিদ্যুৎকেন্দ্রর কাজ চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় এক হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট।
সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগ এই তথ্য দিয়েছে।
পরিকল্পনা যথাসময়ে বাস্তবায়িত হলে নবায়নযোগ্য উৎসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক হতো বলে মনে করে সংসদীয় কমিটি।
বৈঠকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের অপচয় রোধ এবং সারা দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে অনেক বেসরকারি কোম্পানিকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জমি নিয়ে জটিলতায় অনেকে যথাসময়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। পরে সরকার নিজেই সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে, সেগুলো নির্মাণ হচ্ছে।
২০১০ সালে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেখানে ২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদনের কথা ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে নবায়নযোগ্য উৎসনির্ভর ৪০টির বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন ২৩ কেন্দ্রের অনুমতি বহাল আছে। বাকিরা সময়মতো কাজ করতে না পারায় অনুমতি বাতিল করা হয়। এরমধ্যে ১১টি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এ অনুপাতে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদিত হওয়ার কথা দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু এখন
এখন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ৬৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে টেকনাফে ২০, রাউজানে ২৫, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ৩, পঞ্চগড়ে ৮ ও কাপ্তাইয়ে ৭ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র এখন নেই। জলবিদ্যুৎকেন্দ্র আছে একটি, যার উৎপাদনক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।
কমিটির সদস্যরা বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিদ্যুতে অপচয় রোধ করার পরামর্শ তাদের। অপচয় কমাতে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন কার্যক্রম জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এসএম জগলুল হায়দার, নূরুল ইসলাম তালুকদার, আছলাম হোসেন সওদাগর, খালেদা খানম, নার্গিস রহমান ও নুরুজ্জামান বিশ্বাস অংশ নেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের আড়াই কোটি গ্রাহকের মধ্যে অন্তত দেড় কোটি গ্রাহকের কাছে প্রিপেইড মিটার পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মোট ৪১ লাখ ৬ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। বৈঠকে দেশের বিদ্যুৎ খাতের চলমান প্রকল্পগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। ২০১১ সালে দেশে প্রিপেইড মিটার চালু হয়।
বিদ্যুতের বকেয়া বিল সম্পর্কিত সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলা হয়েছে। কমিটি এ-সংক্রান্ত সব মামলার তালিকাও তৈরি করতে বলেছে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী সাশ্রয়ী ও স্থায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ৬৫২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে, যা ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অবসরে যাবে।
২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩৩টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ১৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মেয়াদ শেষে অবসরে গেছে এবং ৪৩৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, সারা দেশে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা রয়েছে ৮ হাজার ৫৫৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৭৪ লাখ, আর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা ৭৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
বৈঠকে জানানো হয়, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডিজেলভিত্তিক ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এখন ৮০ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন ডিজেল ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৪০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে মাসে ডিজেল প্রয়োজন পড়ছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এছাড়া ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয়ও অধিকাংশ জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে সরাসরি আমদানির মাধ্যমে।