‘জাতীয় স্বার্থে’ ডিজেল কেরোসিনের দাম বেড়েছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পক্ষে দেয়া যুক্তিতে সরকার বলছে ‘ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে’ এই দাম বাড়ানো হয়েছে।
জাতীয় স্বার্থ বলতে তিনটি বিষয়ের কথা বলা হচ্ছে। যে তিনটি কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে তা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দাম, প্রতিবেশি দেশে বাড়তি দামের কারণে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা আর উন্নয়ন কাজে খরচ যোগানো।
এদিকে ডিজেলের দাম বাড়ানোর সাথে সাথে বেড়েছে নিত্যপণ্য ও পরিবহন ভাড়া।
জ্বালানি তেলের দামের পাশাপাশি বেড়েছে এলপিজি’র দামও। এলপিজি ও জ্বালানি তেলের দাম একসাথে বাড়ায় করোনার পর ঘুরে দাঁড়াতে থাকা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জ্বালানির দাম বাড়ানোর পক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া ব্যাখায় বলা হয়, ‘সার্বিক প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। যদিও আশেপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য এখনও কম। ৩রা নভেম্বর ভারতের কলকাতায় ডিজেলের মূল্য ছিল লিটারপ্রতি ১০১ রুপি ৫৩ পয়সা বা ১২৪ টাকা ৩৭ পয়সা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পেলে পুনরায় মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বিপিসি প্রায় ৩৩ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ অবস্থায় বিপিসি লোকসানে চলে গেলে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। যা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।’
ডিজেল ও করোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করা হয়েছে। ৪ঠা নভেম্বর থেকে এই দাম কার্যকর হয়েছে।
ডিজেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে ধর্মঘট শুরু করে।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা করা হয়।
সাড়ে পাঁচ বছর ডিজেল ও কেরোসিনে লাভ হয়েছে। এতে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। এতে ডিজেল বিক্রিতে বিপিসি’র লোকসান শুরু হয়। বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করে চলতি বছরের জুন মাসে লিটারপ্রতি ২ টাকা ৯৭ পয়সা, জুলাইয়ে ৩ টাকা ৭০ পয়সা, আগস্টে ১ টাকা ৫৮ পয়সা, সেপ্টেম্বরে ৫ টাকা ৬২ পয়সা এবং অক্টোবর মাসে ১৩ টাকা ১ পয়সা লোকসান হয়। সে হিসাবে গত সাড়ে পাঁচ মাসে ডিজেল বিক্রিতে বিপিসির মোট লোকসান হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান এনার্জি বাংলাকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে আবার ডিজেল-কেরোসিনের মূল্য সমন্বয় করা হবে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এনার্জি বাংলাকে বলেন, মুনাফা করা বিপিসির লক্ষ্য নয়। মাসে ২০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
১লা নভেম্বর পাকিস্তানে ডিজেল এবং কেরোসিন পাকিস্তানি রুপিতে লিটারপ্রতি ১৪২ রুপি ৬২ পয়সা, শ্রীলঙ্কায় লিটারপ্রতি শ্রীলঙ্কান ১৪৪ রুপি এবং নেপালে ১১২ রুপি ৩৯ পয়সা।
২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকার বেশি।