বেতন বৈষম্য: জ্বালানির দ্বিগুণ বিদ্যুৎ কোম্পানিতে
রফিকুল বাসার:
শুধু বাজেট বরাদ্দ নয় বেতনেও বৈষম্য বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে। বরাবরই বিদ্যুতে যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ততটা দেয়া হয় নি জ্বালানিতে। তাই এই খাত পিছিয়ে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দুই বিভাগ। একে অন্যের পরিপূরক। বিদ্যুৎ ছাড়া চাকা ঘোরে না। অর্থনীতি স্থবির হয়ে থাকে। আবার প্রাথমিক জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না। আমাদের বর্তমানে যে সংকট চলছে তা প্রাথমিক জ্বালানির সংকট। বিদ্যুতেরও যে মাঝে মাঝে সংকট চলছে তাও এই প্রাথমিক জ্বালানির কারণেই। তাই গুরুত্ব দুই বিভাগেরই সমান।
কিন্তু সে গুরুত্ব সমান হয়নি বাস্তবে। শুধু বিদ্যুৎকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সবদিক দিয়ে। এই বৈষম্য আছে বেতন ভাতায়ও।
জ্বালানি বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলোতে যারা চাকরি করেন তারা যে বেতন পান তার প্রায় দ্বিগুণ বেতন পান বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানির চাকরীজীবিরা।
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলো উচ্চতর বেতন কাঠামো প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে পেয়ে আসছেন। অথচ পেট্রোবাংলার আওতাধীন কোম্পানিগুলোতে তুলনামূলক কম বেতন। এজন্য কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
বিদ্যুৎবিভাগের কোম্পানিতে একজন মহাব্যবস্থাপকের মাসে বেতন ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। কিন্তু জ্বালানি বিভাগের আওতাধীন কোম্পানির একই পদে বেতন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা। বিদ্যুতে ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা বেশি। বিদ্যুতের কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপকের বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। আর জ্বালানিতে ৫০ হাজার টাকা, ৫৫ হাজার টাকা বেশি। এভাবে সব পদেই পার্থক্য দ্বিগুণ।
বিদ্যুৎখাতের কোম্পানিগুলোর আদলে পেট্রোবাংলার আওতাধীন কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পে-স্কেল বাস্তবায়ন করার দাবি দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি সে দাবি জোরাল হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী গতবছর ২২শে জুন এবিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পেট্রোবাংলায় সভা করেন। সেখানে পেট্রোবাংলার আওতাধীন কোম্পানির বেতন যুগোপযোগী করার নির্দেশনা দেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি পেট্রোবাংলা এবং এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর উপর দেয়া হলেও কোন কার্যকর বা দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যায় নি।
টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থায় মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ জনবল নিশ্চিত করতে
তিতাস গ্যাস ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন বিদ্যুৎখাতের মত স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে দেয়া এক চিঠিতে এসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে টেকসই ও দক্ষ জ্বালানি খাত নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। আর তার জন্য বেতন কাঠামো পরিবর্তন জরুরি। সৎ উপায়ে উপার্জন বাড়ার ফলে সার্বিক বিষয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্বতন্ত্র পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎখাত ও পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের বেতন বৈষম্য দূর হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সমতা ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের একজন প্রকৌশলী এনার্জি বাংলাকে বলেন, বিদ্যুতের সফলতার পেছনে জ্বালানি খাত নিরবে কাজ করে যাচ্ছে। তার উপযুক্ত স্বীকৃতি স্বতন্ত্র পে-স্কেল অবিলম্বে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেওয়া হলে এ কোম্পানিতে কর্মরত সকল স্তরের চাকরিজীবীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের হতাশা দূর হবে। কর্মস্পৃহা ও কাজে গতিশীলতা বাড়বে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎখাতের কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার কোম্পানির বেতন কাঠামোতে ব্যাপক বৈষম্যের কারণে কোম্পানি থেকে অনেক যোগ্য, মেধাসম্পন্ন কর্মকর্তা চলে গেছে এবং অনেকে যেতে চাইছে।
দেশের স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদনের প্রায় ৫২ ভাগ বা ১১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট গ্যাস নির্ভরশীল।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে বেতনের তুলনামূলক চিত্র:
পদ – জ্বালানি কোম্পানি – বিদ্যুৎকোম্পানি
মহাব্যবস্থাপক ৫৬,৫০০ — ১,২২,০০০
উপমহাব্যবস্থাপক ৫০,০০০ — ১,০৫,০০০
ব্যবস্থাপক ৪৩,০০০ — ৯১,০০০
উপব্যবস্থাপক ৩৫,৫০০ — ৭০,০০০
সহকারী প্রকৌশলী ২২,০০০ — ৫২,০০০
১৫তম গ্রেড ৯,৭০০ ২০,০০০
২০তম গ্রেড ৮,২৫০ ১৪,০০০
(প্রতিটি স্তরে শুধু প্রাথমিক পর্যায় তুলনা করা হয়েছে)