আগামী দিনে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থেকেই মিলবে বিদ্যুৎ, চলবে গাড়ি

কলকাতা:

দিন যত এগোচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। সৃষ্টির আদিকাল থেকে বিজ্ঞানীরা তাঁদের নিত্যনতুন আবিষ্কারের খোঁজে অন্বেষণ চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। সব কিছু ঠিক থাকলে এবার সেই তালিকায় যোগ হতে পারে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগান্তর সৃষ্টিকারী আবিষ্কার হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলকে ব্যবহার করে জ্বালানির উৎপাদন (Hydrogen Fuel Cell Technology) ।

কারণ যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোটা পৃথিবী জুড়ে বাড়ছে জালানির চাহিদা। তার সঙ্গে মাত্রা ছাড়া পরিবেশ দূষণ। এই দুইয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল (Hydrogen Fuel Cell)। যাকে দহন করে সহজেই মিলবে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ এবং জালানি। ফলে সাড়া পৃথিবীর একমাত্র ভরসা প্রকৃতির জীবাশ্ম জালানি যেমন সাশ্রয় হবে তার সঙ্গে এই পৃথিবীর মাটি হয়ে উঠবে পরিবেশবান্ধব।

মূলত জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে পৃথিবীর আবহাওয়া ক্রমশ রুক্ষ হয়ে উঠছে। কীভাবে জীবাশ্ম জালানি যেমন কয়লা, পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার রুখে দিয়ে পৃথিবীকে পরিবেশবান্ধব রূপে গড়ে তোলা যায় তাই নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে গবেষণা।

কিন্তু কী এই হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল, তার উপকারিতাই বা কী? এ বিষয়ে গবেষকমহল ঠিক কী ব্যখ্যা দিয়েছেন?

গবেষকদের দাবি হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল (Hydrogen Fuel Cell) হল একটি হাইড্রোজেন গ্যাস সমৃদ্ধ ফুয়েল অর্থাৎ জ্বালানি কোষ। এই কোষটিকে দহন করলে তার মধ্যে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন অনু পুড়ে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ, তাপ এবং জল উৎপন্ন করে। উৎপন্ন হওয়া বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে সঞ্চয় করলে তার থেকে যে শক্তি পাওয়া যাবে তা দিয়ে অতি সহজেই চলবে গাড়ি। এমনকী বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সংস্থায় পাওয়ার গ্রিডের মাধ্যমে ওই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে সহজেই। পাশাপাশি রান্নার গ্যাসের জন্য জ্বালানি হিসাবে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের ব্যবহার করা যাবে বলে দাবি গবেষকদের।

ফুয়েল সেল কীভাবে কাজ করে?

এ বিষয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন মূলত একটি ফুয়েল সেল অর্থাৎ কোষ ফুয়েল সেল স্কেলের ওপর কাজ করে। যার প্রধান কাজ রাসায়নিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর ঘটানো। ওই স্কেলে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন ইনপুট হিসাবে ব্যবহার করে তার থেকে তড়িৎ কোষ উৎপন্ন হয়। ওই তড়িৎ কোষগুলি ব্যাটারিতে সঞ্চয় করলে তা থেকে প্রয়োজন মতো বিদ্যুৎ মিলবে সহজেই। এমনকী বিজ্ঞানীরা এও বলেছেন যে কোনও গাড়ির ব্যাটারি মূলত বড় আকারের হয়। কিন্তু হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ অনেক ছোট মাপের ব্যাটারিতে সঞ্চয় করা যাবে। একবার ওই ব্যাটারি চার্জ করলেই ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গড়াতে পারবে আমাদের সাধের গাড়ি। এ বিষয়ে বিশ্বের একাধিক উন্নতশীল দেশ ইতিমধ্যেই কয়েকধাপ এগিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দেশেও এই হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি উৎপাদনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে পুরোমাত্রায়।

তবে এ বিষয়ে একধাপ এগিয়ে রয়েছে দেশের অন্যতম গাড়ি প্রস্তুর কারী সংস্থা টাটা মোটরস (Tata Motors)। সংস্থার আধিকারিক রাজেন্দ্র পেটকর দাবি (Rajendra Petkar, President & CTO, Tata Motors) করেছেন তাঁরাই দেশের মধ্যে প্রথম ২০১২ সালে একটি হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল চালিত বাসের একটি প্রাথমিক প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করেন। এখনও পর্যন্ত ভারত সরকারের নিজস্ব সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের (ILC) থেকে কাছ থেকে টাটা মোটরস ১৫টি হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল বাসের সরবরাহের জন্য একটি চুক্তি করেছে।

কিন্তু টাটা হোক কিংবা রিলায়েন্স (RIL), অথবা আদানি- চুক্তি যে সংস্থাই করুক হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহার করে গাড়ি যে আমাদের দেশের মাটিতেও আগামীতে চলবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার সঙ্গে পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে আমাদের দেশের মাটি।