এলএনজি আমদানিতে একবছরে ৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এলএনজি আমদানিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে পেট্রোবাংলাকে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি/অনুদান দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রোববার (৩রা এপ্রিল) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এতথ্য জানান।

চট্টগ্রাম-১১ আসনের সদস্য এম. আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান,২০২১-২০২২ অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলার মোট ভর্তুকি প্রয়োজন ছিল ২৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে পেট্রোবাংলার বকেয়া ভ্যাট/এআইটি বাবদ ছিল ৭ হাজার ৩২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। শুধু এলএনজির দাম এবং রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ বাবদ পেট্রোবাংলার ভর্তুকি চাহিদা ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা এলএনজির জন্য অর্থ সংস্থান বেশি প্রয়োজন হওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় বেড়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, আমদানি করা এলএনজির মূল্য বিশ্ববাজারে তেলের দামের সঙ্গে সম্পর্কিত। তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০০ ডলার বেড়েছে, যা রেকর্ড। ২০২০ সালের মার্চে ব্যারেলপ্রতি এলএনজির দাম ছিল ২২ দশমিক ৫১ মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে সেই দাম এসে দাঁড়িয়েছে ১২০ মার্কিন ডলার।

নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে প্রায় ১১ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার প্রতিমিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, স্পট মার্কেট থেকে সর্বশেষ ৩৬ দশমিক ৭০ মার্কিন ডলার প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট হিসেবে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বর্তমানে বৈশ্বিক গ্যাস বাজার অত্যন্ত অস্থিতিশীল। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এই বাজারের এলএনজির দাম প্রায় সাড়ে চারগুণ বেড়েছে বলে জানান নসরুল হামিদ।

অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারির প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের মোট স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও অফগ্রিড নয়ানযোগ্য জ্বালানিসহ)। বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদার পরিমাণ বেড়ে গড়ে প্রতিদিন ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রাঞ্চলে অবস্থিত ব্লকগুলো নিজেরা খনন করার পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। অগভীর এবং গভীর সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উৎপাদনকার্যক্রম উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর, অত্যধিক ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় উৎপাদন বণ্টন চুক্তির (পিএসসি) আওতায় আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

পেট্রোবাংলার আওতাধীন দেশীয় অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের স্থলভাগে সক্ষমতা থাকলেও সমদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উৎপাদন বিশেষভাবে প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়বহুল হওয়ায় সে সক্ষমতা নেই।

বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, সুষ্ঠু ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দেশের বড় বড় শহর তথা মেট্রোপলিটন এলাকায় বিদ্যুত লাইনের তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় ডিপিডিসির ১ হাজার ২৮৭ কিলোমিটার ও ডেসকো ১ হাজার ৩৬৬ কিমি, বাবিউবো সিলেটে ৩৮ কিমি, নেসকো রাজশাহী ও রংপুরে ১১ কিমিসহ প্রায় ২ হাজার ৭০২ কিমি ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণ সম্পন্ন করেছে।