গ্যাসের দাম ৩ বা ৬ মাস পরপর নির্ধারণ করতে চায় বিইআরসি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতি তিন মাস বা ছয় মাস পরপর ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করতে চায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)।
দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ, এলএনজি আমদানির পরিমাণ, আমদানি করা এলএনজির মূল্য এবং মার্কিন ডলারের বিনিময় হার পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে এই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিটিআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত না হলেও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে কমিশন সূত্র।
বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে তা মূল্যায়ন করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। একই সাথে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব মূল্যায়ন করে কারিগরি কমিটি বিভিন্ন সুপারিশ করেছে। সেখানে প্রতি তিন মাস অথবা ছয় মাস পরপর গ্যাসের দাম সমন্বয় করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
২১ থেকে ২৪শে মার্চ রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের উপর শুনানি হয়েছে।
শুনানিতে সিস্টেম লস নির্ধারণের জন্য বিতরণ কোম্পানির অঞ্চলভিত্তিতে মিটার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হয়। যাতে কত গ্যাস নিল আর কত ব্যবহার করা হল তা জানা যায়।
কোম্পানিগুলো কত গ্যাস নিচ্ছে এবং কত ব্যবহার করছে তা জানার জন্যও জিটিসিএলের মিটার বসানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মিটারবিহীন এক চুলার গ্রাহকদের জন্য ৫৫ ঘনমিটার এবং দুই চুলার জন্য ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার বিবেচনায় আবাসিক মিটার ছাড়া গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে দামের বৈষম্য কমবে বলে মনে করছে বিইআরসি।
জ্বালানি খাতের গবেষণায় জন্য প্রতি ঘনমিটারে ৪২ পয়সা নিয়ে জ্বালানি গবেষণা তহবিল গঠন করার কথা বলা হয়েছে।

এক চুলা ৯৯০ দুই চুলা ১০৮০ টাকা করার সুপারিশ

আবাসিক গ্রাহকদের একচুলা মাসে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলা এক হাজার ৮০ টাকা আর আবসিক মিটারের গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এখন আবাসিক গ্রাহকদের দুই চুলার জন্য মাসে দিতে হয় ৯৭৫ টাকা। আর এক চুলায় ৯২৫ টাকা।
ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গত জানুয়ারিতে গড়ে ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। এতে এক চুলায় ২ হাজার ও দুই চুলায় ২ হাজার ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।
প্রত্যেক শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কমিটি।
বিদ্যুতের প্রতি ঘনমিটার চার টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ থেকে ৩৪ পয়সা, ক্যাপটিভ ও বাণিজ্যিক বিদ্যুতে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা, সারে চার টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ থেকে ৩৪ পয়সা, বড়শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৬৯ পয়সা, চা শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৬৫ পয়সা, বাণিজ্যিক (হোটেল) ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা ৬০ পয়সা, সিএনজিতে ৪৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল শুনানিতে বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তবে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে। এবার মূল্য নির্ধারণে অবিবেচক হবে না।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, দাম বাড়ানোর জন্য গোঁজামিল দেয়া হচ্ছে। এসব হিসাব বাস্তবসম্মত নয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরূল ইমাম বলেন, যথাযথ অনুসন্ধান হলে বাড়তি দামের গ্যাস কেনার প্রয়োজন হতো না। বেশি করে অনুসন্ধান করতে হবে। দেশের গ্যাস ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাহলে বারবার দাম বাড়ানো লাগবে না।