বিদ্যুৎ ও এলএনজিতে ভর্তুকি বরাদ্দ দ্বিগুণ

বিশেষ প্রতিনিধি:
আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও এলএনজিতে চলতি বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভর্তুকি রাখা হতে পারে।
২০২২-২৩ অর্থবছর বাজেটে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। চলতি বাজেটে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেটের তথ্য অনুযায়ি)।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) দুই লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা আর পরিচালন খরচ চার লাখ ৩১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। সরকারি বেতন লাগবে ৭৪ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হবে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ; এই তিনটি খাতে মোট খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে জ্বালানি, সার আর খাদ্যে থাকতে পারে ৫৭ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম সমন্বয় না হলে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমান দামই থাকলে এই পরিমান ভর্তুকি লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্য পরিশোধ ও প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি ১৭ হাজার ৩০০ কোটি, খাদ্য ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি এবং কৃষি প্রণোদনা ১৫ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া চলছে, সেখানে সিদ্ধান্তের উপরও এই ভর্তুকি কিছুটা কমতে পারে।
এবার সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি থাকতে পারে সার আমদানিতে। আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দাম থাকায় বেশি দামে এনে কম দানে বিক্রির জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। সারের দাম বাড়ানো হবে না বলে জানানো হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না জকমলে এই ভর্তুকি সাওে লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
বিদ্যুৎ, গ্যাস, খাদ্য ও কৃষি খাতের বাইরে রফতানি, পাট, ঋণের সুদ, প্রণোদনা, সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়।
প্রতিবছর বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাড়ছে। ফলে বরাদ্দও বাড়ানো হচ্ছে। ২০২২ অর্থবছর বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ ছিল ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ১২ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫৩ হাজার ২৮২ কোটি টাকা করা হয়।
করোনাভাইরাস মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবে আসন্ন বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তা ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি গড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ ঠিক করা হয়েছে। অর্থবিভাগ মনে করছে, আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ হতে পারে। এরমধ্যে বেসরকারি খাত থেকে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরকারিখাত থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ হতে পারে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলার মোট ভর্তুকি প্রয়োজন ছিল ২৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে পেট্রোবাংলার বকেয়া ভ্যাট/এআইটি বাবদ ছিল ৭ হাজার ৩২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। শুধু এলএনজির দাম এবং রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ বাবদ পেট্রোবাংলার ভর্তুকি চাহিদা ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা এলএনজির জন্য অর্থ সংস্থান বেশি প্রয়োজন হওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় বেড়েছে।
আমদানি করা এলএনজির মূল্য বিশ্ববাজারে তেলের দামের সঙ্গে সম্পর্কিত। তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০০ ডলার বেড়েছে, যা রেকর্ড। ২০২০ সালের মার্চে ব্যারেলপ্রতি এলএনজির দাম ছিল ২২ দশমিক ৫১ মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে সেই দাম এসে দাঁড়িয়েছে ১২০ মার্কিন ডলার।
বর্তমানে প্রায় ১১ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার প্রতিমিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, স্পট মার্কেট থেকে সর্বশেষ ৩৬ দশমিক ৭০ মার্কিন ডলার প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট হিসেবে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ।