বৈশ্বিক জ্বালানির ভূ-রাজনীতি নিয়ে ধারণা থাকতে হবে: তৌফিক ই ইলাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেছেন, কৃষি ও শিল্পকে জ্বালানি দিয়ে, বাঁচিয়ে রেখে আমাদের অন্য সব করতে হবে। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। বৈশ্বিক জ্বালানির ভূ-রাজনীতি নিয়ে ধারণা থাকতে হবে। না হলে জ্বালানি সমস্যা বোঝা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (৪ই অগাস্ট) রাজধানীর এফবিসিসিআই ভবনে টেকসই উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাদ হোসেন। তিনি কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। বলেন, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুতে গ্যাসের ব্যবহার কমাতে হবে। পর্যায়ক্রমে গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে হবে। না হলে, যখন গ্যাসের পুরোটাই আমদানি নির্ভর হবে তখন গ্যাস এবং বিদ্যুৎ উভয় ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার উৎপাদনে ভর্তুকি দিয়ে গ্যাস দিতে হবে। যানবাহনে ব্যবহার করা জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়া যাবে না। গ্যাসের অপচয় রোধ করতে হবে। সকল খাতে জ্বালানির সর্বোত্তম ও সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

শিল্পে সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি সরবরাহের দাবি করেছে এফবিসিসিআই। দেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে হবে বলেও মনে করেন ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, মানুষের মতো গ্যাসক্ষেত্রেরও একটা আয়ুষ্কাল আছে। সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের পরিমাণ মোট ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের নীতি হল দেশের কৃষি ও শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা। দেশে বিদেশি কোম্পানিগুলো
বিশাল অংকের একটা প্রফিট তুলে নিয়ে যাচ্ছে।এরা বাংলাদেশের পেটে লাথি দিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের জন্য একটা পরীক্ষা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য এটা আরও কঠিন পরীক্ষা। এই পরীক্ষা কাটিয়ে উঠতে হলে মুক্তিযুদ্ধের মতো আমাদের একটু ত্যাগী হতে হবে। এসিতে সভা-সেমিনার না করে বিদ্যুৎ চালিতে পাখাতে এটা করা দরকার। আমিও ফ্যান চালিয়ে এখন এই সভা করছি।
বাংলাদেশের শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বাসাবাড়ির মতো শিল্পেও লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানির সঙ্গে শিল্পকে প্রাধান্য দিতে হবে। উৎপাদন কমে গেলে রপ্তানি কমে যাবে। রপ্তানি কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রায় চাপ পড়বে। তাই গ্যাসের মজুত বাড়াতে বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে হবে। সমুদ্রে গ্যাসের আহরণ বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবেশ ধ্বংস না করেও উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদন করা যেতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কয়লা বিদ্যুৎ থেকে জ্বালানির বড় অংশের চাহিদা মেটাচ্ছে ।
সভাপতি বলেন, বিদেশি আর দেশি কোম্পানির মধ্যে যে গ্যাস উত্তোলনের পার্থক্য তা কমিয়ে আনতে হবে। লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে রেশনিং করা দরকার।
তিনি বলেন, জ্বালানির ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। বর্তমানে শিল্পের উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকারের নীতি হল বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে শিল্পে বাড়িয়ে দেওয়া। শিল্পকে সুরক্ষা করা।