বাংলাদেশ রাশিয়ার তেল নিলে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাবে: উপদেষ্টা
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম বলেছেন, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করলে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাবে।
সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করে এসেছেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি হোসে ফার্নান্দেজের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ নিয়ে
বুধবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আায়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে একটা উদাহারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। আমি বললাম- উন্নয়নশীল দেশের উদাহরণ যদি হয়, তাহলে তো আমাদেরকে আপানাদের সমর্থন দেওয়া দরকার। আমাদের জ্বালানির দাম বেড়ে আকাশচুম্বি হয়ে গেছে। এটা কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। তখন কথায় কথায় ফার্নান্দেজ বললেন, সার খাবার ও তেলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আমি তখন সরাসরি প্রশ্ন করলাম, তাহলে আমরা কি অন্য জায়গা (রাশিয়া) থেকে ডিজেল আনতে পারব? তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। হ্যাঁ-ও বললেন না, না-ও বললেন না। আমি সাধারণ মানুষ। আমি এটাকে হ্যাঁ ধরে নিয়েছি। এখন ডিপ্লোম্যাটরা বিস্তারিত বলতে পারবেন।”
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “আমাদের সুযোগ এসেছে কম মূল্য অন্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে তেল নেওয়ার। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে আমাদেরকে সমর্থন দেবে। ইউরোপ এখনও রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। এটাই বাস্তবতা। দেখা যাবে জ্বালানির দাম কমে গেলে বাংলাদেশের এখন যে সমস্যা, তার কিচ্ছু থাকবে না। ফরেইন রিজার্ভ, ডোমেস্টিক ইনফ্লেশন থেকে শুরু করে কিছুই না।”
যুদ্ধের ফলে আমাদের মত দেশগুলো যে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে, সেই পরিস্থিতি আমি আন্ডার সেক্রেটারি ফার্নান্দেজের সঙ্গে বৈঠকে তুলে ধরেছি। ইউক্রেনে যুদ্ধ যেটা হচ্ছে, সেটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এটা উচিত হচ্ছে না। আামার মনে হয়েছে, আমেরিকার প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত আছে। যুদ্ধের অভিঘাতকে কীভাবে সীমিত করা যায়, তারা সেটা ভাবছে। আমার নিজের ধারণা, এই যুদ্ধের প্রকোপ কমবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ওই প্রশংসার সূত্র ধরেই তিনি রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সুযোগ আছে কিনা জানতে চান।
তেল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকি কমাতে আর ডলার বাঁচাতে সরকার অগাস্টের শুরুতে জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। তার প্রভাব যানবাহনের ভাড়া থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার প্রায় সব ক্ষেত্রে পড়ে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমায় বাংলাদেশে দুদিন আগে তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানো হয়। ভবিষ্যতে আবারও তা সমন্বয় করা হবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিক ঘটনা হলেও আমাদের দেশের কিছু মানুষ এটাকে বাংলাদেশের সমস্যা হিসাবে উপস্থাপন করছে। এটা আমাদের এত বড় অর্জনকে আন্ডারমাইন করছে।”
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, রাশিয়া থেকে পরীক্ষা করার জন্য যে অপরিশোধিত তেল এসেছে, তা এখন রিফাইনারিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। বিস্তারিত ফল এখনও মেলেনি।
উপদেষ্টা বলেন, “২০০৯ সালের চেয়ে চারগুণ বেশি বিদ্যুৎ আমরা এখন উৎপাদন করছি। এটা অনেক বড় অর্জন। এখন উই আর ভিকটিম অব আওয়ার ওন সাকসেস। ডিমান্ড বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা চারগুণ উৎপাদন বাড়িয়েও কূল করতে পারছি না। এজন্য আমরা গর্বিত।”
বিনিয়োগের আগ্রহ
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিনিয়োগ করতে চায় বলেও জানান তৌফিক-ই-ইলাহী।
তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন-ডিএফসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
“আলোচনায় বলা হল যে ভারতে তারা ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আমি বললাম, তাহলে আমাদের দেশেও বিনিয়োগ করো। তারা বাংলাদেশে একটা প্রতিনিধি দল পাঠাবে। তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ক্লিন এনার্জির দিকে বেশি আগ্রহী।
“হাইড্রোজেন এনার্জি সোর্স, কার্বন ক্যাপচার্ড সোর্স, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর- এগুলো ক্লিন এনার্জি। এগুলোর ক্ষেত্রে তারা সাহায্য করতে চায়। আমেরিকায় ছোট ছোট রিঅ্যাক্টরের একটা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। তারা চাইলে সেটাও এখানে পরীক্ষা করে দেখতে পারে। পাইলটিং করতে পারে। তাতে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
এর বাইরে বাংলাদেশের নির্বাচনের কথাও আলোচনায় উঠেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে আমি বলেছি, সবাই চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। এটাকে বড় করে আমরা জাতীয় নির্বাচন করতে পারি।
“তারা আমার মন্তব্যে সন্তুষ্ট হয়েছে। কিন্তু তারা জাতীয় নির্বাচনে এনগেজ থাকতে চেয়েছে। আমিও বলেছি যে, এ ধরনের নির্বাচনে আমরা সব সময় বাইরের পর্যবেক্ষকদের আসতে দিই। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পলিসি মানতে রাজি আছি।”