বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মানতে হবে
সম্পাদকীয়:
মাস পার না হতেই আবার বিদ্যুতের গ্রিড বিপর্যয়। এবার বড় ধরণের বিপর্যয়। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। এবার হলো পূর্বাঞ্চলে। এক মাসের ব্যবধানে দেশে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়। এরআগে ২০০২, ২০০৭, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৭ সালে জাতীয় গ্রিডে এ ধরনের বিপর্যয় হয়েছিল।
এসব বিপর্যয়ের পরে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ বা সুপারিশ করেছিলেন তার কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু হয়নি। বড় অংশই বাস্তবায়ন হয়নি।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সঞ্চালন ব্যবস্থা এখনো উন্নত হয়নি। উৎপাদনে যতটা নজর দেয়া হয়েছে ততটা দেয়া হয়নি সঞ্চালনে। গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেটা যে রাস্তা দিয়ে চলবে তা করা হয়নি। এই সমন্বয়হীনতা আজকের পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দও দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনও হয়েছে অনেক। কিন্তু নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ দেয়া যায়নি। উদ্যোক্তরা এখনও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের উপর নির্ভর করতে পারেনা। শিল্পকারখানা নির্ভর করে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থায়। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। অপচয়ও।
উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ, ব্যবহার সবকিছু মিলিয়েই আদর্শ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কিন্তু নজর দেয়া হয়েছে শুধু উৎপাদনে। এখানে সমন্বয়ের যে অভাব তা পরিস্কার। সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে নজর দেয়া হয়নি।
কোন একটা ঘটনা ঘটলে সকলে সেদিকে নজর দেয়। পরিকল্পনার কথা জানায়। কিন্তু কিছু দিন পরে তা আবার থেত হয়ে যায়। পরিকল্পনা থেকে সরে যায়। এভাবে চলতে দেয়া যাবে না। পরিকল্পিতভাবে আগাতে হবে। এমনভাবে করতে হবে যেন সবদিক একসাথে হয়। রাস্তা বানাতে বানাতে যেন গাড়িতে জং ধরে না যায়।
সাধারণত সঞ্চালন লাইন বা সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা, ফ্রিকোয়েন্সিতে ভারসাম্যহীনতা, সঞ্চালন ও সরবরাহ লাইনে মানহীন যন্ত্রপাতি ব্যবহার, গ্রিডের সঙ্গে গ্রিড কোডের নির্দেশনার সমন্বয়ের অভাব, চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের সমন্বয় না হওয়া, ফোনে ফোনে লোড ব্যবস্থাপনা, মানহীন বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। এসবের অধিকাংশই বাংলাদেশে বিদ্যমান। এগুলো উন্নয়নে পদক্ষেপ তেমন নেয়া হয়নি।
সম্প্রতি লোডশেডিংও বেড়েছে। মানুষের আকাঙ্খা প্রত্যাশা অনেক। বিদ্যুৎ যে যায় তা ভুলেই গিয়েছিল সবাই। এখন নতুন করে মনে পড়ে যাচ্ছে। তাই এটা মেনে নেয়া যাচ্ছে না। এখনই পরিকল্পিতভাবে এর ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে আসতে হবে।
অতীতে বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ করেছে, গ্রিডকে উন্নত করাসহ উৎপাদন সঞ্চালন ব্যবস্থাপনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।