ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পরিণত স্থল নিম্নচাপে

নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ:
ভয় জাগালেও মাঝারি শক্তি নিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানল ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’; তবে তেজকটালের মধ্যে এই ঝড় আসায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে ভেসেছে উপকূল।

ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে গাছ ও দেয়াল চাপা পড়ে অন্তত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গাছ ভেঙে পড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কও বিঘ্নিত হচ্ছে।

মাঠে এখন আমন ফসল থাকায় ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে; জোয়ারে উপকূলে মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুরে সড়কে গাছ পড়ে মহাসড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। ঝড়ে আসার আগেই লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশালে বিমান ওঠানামাও বন্ধ করা হয়।

ঝড়ের আগে রাত পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ৬ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সোমবার রাত ৯টায় ঝড়টি ভোলার পাশ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে বলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়। সম্পূর্ণ ঘূর্ণবায়টি উপকূলে উঠে আসতে ৩-৪ ঘণ্টা লাগবে বলে জানানো হয়েছিল।

মধ্যরাতে এই ঘূর্ণবায়টির প্রায় সম্পূর্ণই স্থলভাগে উঠে আসার চিত্র দেখা যায় জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের স্যাটেলাইট ছবিতে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক রাত ২টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করেছে। এখন এটি স্থল নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করছে।”

ড. কালাম মল্লিক বলেন, “স্থল নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বে। এখন তা ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এলাকায় অবস্থান করছে। আরও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে।”

এর প্রভাবে মঙ্গলবারও বৃষ্টি থাকবে বলে জানান তিনি।

মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল।

তবে উপকূল অতিক্রমের পর চারটি সমুদ্রবন্দরকেই বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

চারশ’ থেকে পাঁচশ’ ব্যাসের ‘সিত্রাং’ উপকূল অতিক্রমের সময় এর শক্তি অনেকটাই কমে আসে। তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার ছিল, যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার বাড়ছিল।

তবে ঝড়টি আঘাত হানার আগে এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৯০ কিলোমিটারের বেশি।

দিনভর বৃষ্টি ঝরলেও ঝড় উপকূল অতিক্রমের সময় সাতক্ষীরা থেকে বরিশালে বৃষ্টি অনেকটাই কমে গুমোট অবস্থা বিরাজ করছিল। মধ্যরাতেও একই অবস্থা ছিল সাতক্ষীরাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে।

ঢাকায় দিনভরই বৃষ্টি ছিল, সন্ধ্যার পর ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে, পানিতে ডুবে যায় নানা সড়ক। তবে রাত ১০টার পর বৃষ্টি ও বাতাস দুটোই কমে আসে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে খেপুপাড়ায় ২৯৪ মিলিমিটার। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ ১২৫ মিলিমিটার।

উপকূলে আতঙ্কের প্রহর

ঝড় উপকূলের কাছাকাছি আসার আগেই প্রবল বাতাসে আতঙ্ক ছড়ায় উপকূলে।

নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার শামীমুজ্জামান শামীম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে প্রচণ্ড বাতাস বইছে। এখন ভাটার সময় হলেও মেঘনা নদীর পানি ফুলছে; তবে জোয়ারের সময় তা আর বেশি হবে।”

উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে স্থানীয় এ সাংবাদিক জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে অতি ভারি বৃষ্টি হচ্ছিল। ঝড়ের দিনে নলছিঁড়া ঘাটে তিনটি নৌকা ডুবে যায়। বিদ্যুৎও চলে গেছে। নিঝুম দ্বীপে মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।
<div class=”paragraphs”><p>জোয়ারে তলিয়েছে ভোলা</p></div>

জোয়ারে তলিয়েছে ভোলা

মনপুরা উপজেলার সমেদপুর বাংলা বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুপম দাশ রাত ৯টার দিকে হাজিরহাট এলাকায় নিজের বাসায় ছিলেন।

তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলেও প্রচণ্ড বাতাস বইছে। মেঘনা নদীতে পানি বাড়ছে। রাস্তায় রাস্তায় গাছপালা ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।

পটুয়াখালীর বঙ্গোপনাগরের তীরবর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলার সংবাদকর্মী আইয়ুব খান জানান, চরমন্তাজে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি ছিল। সন্ধ্যা ৭টায় বৃষ্টি কমে যায়। আবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে বাতাস ও বৃষ্টি বেড়েছে। বুড়ি গৌরাঙ্গ নদীতেও পাল্লা দিয়ে পানি বাড়ছে।

তিনি জানান, উপজেলায় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছিল। বৃষ্টি, বাতাস ও জলাবদ্ধতায় সেগুলোর ক্ষতি হবে। ক্ষেতে পানি আটকে যাচ্ছে। রাতে ২০০ এর মতো মানুষ চরমন্তাজ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আগেই জানিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোর দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার পূর্বাভাসও ছিল।

পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার উপকূলীয় শহরও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

৭ মৃত্যু

গাছ ভেঙে পড়ে এবং দেয়াল ধসে দেশের চার জেলায় অন্তত সাতজনের মৃত্যুর খবর এসেছে ঝড়ের উপকূল অতিক্রম শুরুর পরপরই।

ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাশন এবং নড়াইলের লোহাগড়ায় গাছ ভেঙে তিনজনের মৃত্যু হয়। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ঝড়ো বাতাসে ঘরের ওপর গাছ পড়ে প্রাণ যায় এক দম্পতি এবং তাদের চার বছরের শিশুর। ঢাকার হাজারীবাগের মনেশ্বর রোডে দেয়াল ধসে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়।

ঝড়ের মধ্যে রাত ১১টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল পশ্চিম পাড়ায় গাছ ভেঙে ঘরের উপর পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- হেসাখাল পশ্চিম পাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী এবং তাদের মেয়ে চার বছরের শিশু নুসরাত আক্তার লিজা।

হেসাখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বাহার বলেন, “ঝড়ো বাতাসে বড় একটি গাছ উপড়ে তাদের ঘরের ওপর পড়ে। পরে ভেতর থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।”

নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ঘরের ওপর পড়া গাছটি সরানোর চেষ্টা করছেন তারা। ওই তিনজন ছাড়া আরও কেউ চাপা পড়েছে কি-না, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।

ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাশন উপজেলায় দুইজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

দৌলতপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে পৌরসভায় একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।

নিহত নারীর নাম বিবি খাদিজা (৮০) বলে জানা গেছে। তিনি দৌলতখান পৌরসভায় মৃত গোলাম মোস্তফার স্ত্রী।

পরিবারের সদস্যরা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরের ওপর গাছ পড়লে ওই বৃদ্ধা নিচে চাপা পড়েন। আত্মীয়-স্বজনরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চরফ্যাশনের ইউএনও আল নোমান বলেন, সেখানে আলম স্বর্ণকার নামে এক ব্যক্তি ভেঙে পড়া গাছের ডালের সঙ্গে আঘাত পেয়ে নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার এওয়াজপুর এলাকার বাসিন্দা।

পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তিনজন মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। পথে ঝড়ে একটি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল। চালক ডালের নিচ দিয়ে গিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারলেও আলম ডালে আঘাত পান। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘূর্ণিঝড় উপকূলে পৌঁছানোর আগেই দুপুরে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে বলে লোহাগড়া থানার ওসি মো. নাসির উদ্দীন জানান।

নিহত মর্জিনা বেগম (৪০) বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামের বাসিন্দা। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১১ বছরের ছেলেকে নিয়ে তিনি লোহাগড়া পৌর এলাকার রাজপুর গ্রামের আবদুল গফ্ফারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিনি।

দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর দিয়ে যাওয়ার সময় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সামনে পৌঁছালে একটি মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে তার মাথায় পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। লোকজন তাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর আলী বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। নিহতের পরিবারকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে সন্ধ্যায় ঢাকার হাজারীবাগে দেয়াল ধসে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়। নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

হাজারীবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক খন্দকার বলেন, “ঘটনার সময় বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। নিহত ব্যক্তি রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন বাইক আরোহী। তখন চারতলা একটি ভবনের ছাদের রেলিং ধসে পড়ে।”

আশ্রয় কেন্দ্রে ৬ লাখ মানুষ, অন্যান্য প্রস্তুতি

প্রাণক্ষয় এড়াতে ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই উপকূলীয় এলাকার মানুষদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে সরকার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে জানান, ৭ হাজার ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে এবং ২৫ লাখ মানুষ এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবেন।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে এনে তাদের জীবন রক্ষা করা। একটি লোকও যদি মৃত্যুবরণ না করেন এটাই হবে সফলতা।

“গবাদিপশুকে রক্ষা, ঘরের খাদ্যগুলো সঠিকভাবে রক্ষাবেক্ষণ করে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।”

রাত ১০টা পর্যন্ত উপকূলীয় ১৫ জেলায় ৬ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার কথা জানায় মন্ত্রণালয়ভ

সেই সঙ্গে এক লাখ ১৯ হাজারের বেশি গবাদি পশুকেও নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও তদারকিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তার কার্যালয়ে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।

মনিটরিং সেলের হটলাইন নম্বরগুলো হল- 1769010986, 02-55029550 ও 02-58153022। ফ্যাক্স নম্বর 02-9102469

প্রয়োজনে সেলের হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ঝড় পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য নৌবাহিনীর ১৭টি জাহাজ প্রস্তুত বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

সতর্কতামূলক পদক্ষেপ

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই সোমবার সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিমানবন্দর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আবহাওয়ার পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এ তিন বিমানবন্দর।

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি থেকে পণ্যবাহী সবগুলো জাহাজকে বহির্নোঙরে সরিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া নিজস্ব সতর্কতা অ্যালার্ট-৩ জারি করা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সারা দেশে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ।

বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “সকালে চাঁদপুর রুটে কিছু লঞ্চ চলাচল করলেও সোমবার দুপুর থেকে সারাদেশে লঞ্চসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নতি হলে পরবর্তীতে নৌযান চলাচলের ঘোষণা দেওয়া হবে।”

এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

যেভাবে ঘূর্ণিঝড়

বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় আসছে, এমন আভাস মিলেছিল আগেই, তার সপ্তাহ খানের পর আন্দামান সাগরে সেই লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, এটি বঙ্গোপসাগরে এসে পরিণত হয় নিম্নচাপে। পরে এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।

ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পাওয়ার পর এ ঘূর্ণিবায়ু চক্রের নাম হয় সিত্রাং। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তরের নির্ধারিত তালিকা থেকে ধারাবাহিকভাবে এই অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেওয়া হয়।

সিত্রাং নামটি নেওয়া হয় থাইল্যান্ডের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে, যার অর্থ পাতা।

গত ২০ অক্টোবর আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় লঘুচাপের সৃষ্টি হয়।পরদিন এটি পরিণত হয় সুস্পষ্ট লঘুচাপে।

২২ অক্টোবর সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয় পর দিন। ২৩ অক্টোবর এটি রূপ নেয় ঘূর্ণিঝড়ে।