সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে আর সময়ক্ষেপণ নয়

সম্পাদকীয়

দীর্ঘ দিন পর গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত করা হয়েছে নতুন উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) খসড়া। একইসাথে জলভাগে দ্বিমাত্রিক জরিপের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এখন দরপত্র আহ্বান করে কিম্বা আলোচনার মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দিতে হবে। সেই প্রক্রিয়া শেষ করতেও বছর লেগে যাবে। তাই খসড়া পিএসসি চূড়ান্ত করার পর এখন আর সময়ক্ষেপণ না করে পরের ধাপে দ্রুত যেতে হবে।
২০১৯ সালের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। সে সময় খসড়া পিএসসি করা হলেও আর দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
এক দশক আগে সমুদ্রসীমা নিয়ে ঐতিহাসিক বিজয়ের পর এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজের অগ্রগতি হয়নি।
২০১২ সালের পিএসসি অনুযায়ি চারটি বিদেশি কোম্পানিকে অগভীর সমুদ্রে কাজ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি কাজ শুরু বা শেষ না করে চলে গেছে। এরপর এই সময়েও নতুন কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
দেশে প্রাথমিক জ্বালানি সংকট দীর্ঘ দিনের। সংকট মেটাতে জ্বালানি সরবরাহ অনেক বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে সরবরাহ করা যায়নি। যতই সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে ততই চাহিদা বেড়েছে। ফলে ঘাটতি পিছু ছাড়েনি।
এই সংকট মেটাতে বরাবরই অনুসন্ধান জোরদার করার পরামর্শ দিয়ে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে।
সমুদ্র বিজয়ের পর প্রতিবেশি দেশ ভারত ও মিয়ানমার গ্যাস উত্তোলন করলেও বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রে কোনো অনুসন্ধানই করা হয়নি। গ্যাস আদৌ আছে কিনা তাই এতদিনে জানা যায়নি। এনিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে জ্বালানি বিভাগকে।
২০১২ সালের অভিজ্ঞতা নিয়ে পেট্রোবাংলা বলছে, বিদেশী কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হয়নি। আর তাই তারা কাজ করেনি। এবার সুবিধার ঝুলি খুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও পেট্রোবাংলা বলছে, এটা বেশি সুবিধা নয় যৌক্তিক করা হয়েছে।
যাহোক, এতদিন পেট্রোবাংলা যে অভিযোগ করত, সুবিধা নেই বলে বিদেশী বিনিয়োগ আসেনা। তা আর থাকলো না। ফলে এখন আর অপেক্ষা না করে সমুদ্রের খনিজ সম্পদ আহরণে কার্যকরী পরবর্তী পদক্ষেপে যেতে হবে।

আগের যত পিএসসি
১৯৭৪ সালে প্রথম অগভীর সমুদ্রের ৬টি ব্লকের জন্য ৬টি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়। পরে তারা কাজ না করে চলে যায়।
১৯৮৮ সালের আহ্বান করা দরপত্রে কোন আন্তর্জাতিক কোম্পানি আসেনি।
১৯৯৩ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে শেভরণের সাথে চুক্তি হয়।
১৯৯৪ সালে কেয়ার্ন এনার্জি ও শেল যৌথভাবে এবং পরে স্যান্তোষের সাথে ১৫ ও ১৬ নম্বর ব্লক নিয়ে চুক্তি হয়। ১৫-তে গ্যাস পাওয়া যায়নি। ১৬-তে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়।
১৯৯৭ সালে স্থলভাবে ৪টি ব্লকের জন্য চুক্তি হয়।
২০০৮ সালে গভীর সমুদ্রের ব্লক ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের জন্য কনোকোফিলিপসের সাথে চুক্তি হয়। চুক্তির বাইরে গিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। কিন্তু তা মানা হয়নি। ২০১৫ সালে তারা চলে যায়।
২০১২ সালের পিএসসি অনুযায়ি ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ওএনজিসি ও দক্ষিণ কোরিয়ার পসকো দাইয়ু’র সাথে চুক্তি হয়।
২০১৯ সালের পিএসসিতে করোনার কারণে আর দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।