প্লুটোর পৃষ্ঠে ‘হার্ট শেইপ’ কোথা থেকে এল?
বিডিনিউজ :
প্লুটোর পৃষ্ঠে একটি স্বতন্ত্র ‘হার্ট শেইপ’ বা হৃৎপিণ্ডের আকৃতি শনাক্ত হয়েছিল। ২০১৫ সালে নাসার নিউ হরাইজন মিশনের ওই আবিষ্কার নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে মানুষ ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
একসময় আমাদের সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসাবে বিবেচিত হতো প্লুটো।
‘টমবাঘ রেজিও’ নামে পরিচিত এ চিহ্নটি আংশিকভাবে ‘স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া’ নামের অঞ্চল নিয়ে গঠিত, যা দেখতে একটি বিশালাকার পানির ফোটার মতো। আর এর আকার ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক চতুর্থাংশের সমান।
প্লুটোতে এ অনন্য ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য কীভাবে এল, সে বিষয়টি জানতে উন্নত কম্পিউটার সিমুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন সুইজারল্যান্ডের ‘ইউনিভার্সিটি অফ বার্ন’ ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা’র গবেষকরা।
এর আগে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পান, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের সমান কোনো বস্তুর সঙ্গে বিশাল সংঘর্ষে ‘স্পুটনিক প্লানিটিয়া’ অঞ্চলটি তৈরি হয়েছিল।
এ ঘটনা প্লুটোর আদিকালে ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়, যার সঙ্গে এর বর্তমান রূপেও অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ওই ঘটনা কোনো সোজাসাপ্টা সংঘর্ষ নয় বরং আঁচড় কেটে যাওয়ার মতো আঘাত থেকে এসেছে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, কেন ‘স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া’র দীর্ঘ আকৃতি আছে ও এটি বিষুবরেখা বরাবর বসে আছে।
যে বস্তুটি প্লুটোকে আঘাত করেছিল তা তুলনামূলক ধীরে ও একটি কোণ ঘেষে চলাচল করছিল, যা প্লুটোকে খুব গভীরে আঘাত না করে বা এর বরফের ভূত্বক না গলিয়ে প্লুটোর সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
অনুসন্ধানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি প্লুটোর ভেতরের অবস্থা নিয়ে আগের বিভিন্ন প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এতদিন বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা ছিল, প্লুটোর বরফওয়ালা পৃষ্ঠের নিচে মহাসাগর লুকিয়ে থাকতে পারে। ঠিক যেমনটি ধারণা করা হয় দূরের বিভিন্ন মহাকাশীয় বস্তুর ক্ষেত্রে।
নতুন এ গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, প্লুটোতে আসলেই যদি মহাসাগর থেকে থাকে, তবে এর আকার অনেক ছোট বা এর অস্তিত্ব না থাকার মতোই।
অঞ্চলটি শুধু এর উৎস নয় বরং এর গঠনের জন্যেও আকর্ষণীয়। প্লুটোর সিংহভাগ পৃষ্ঠ মিথেন বরফে আবৃত হলেও ‘স্পুটনিক প্লানিটিয়া’ মূলত ঢেকে আছে নাইট্রোজেন বরফে। এলাকাটির উচ্চতাও এর আশপাশের এলাকাগুলোর চেয়ে চার কিলোমিটার কম, যার প্রভাবে সেখানে নাইট্রোজেন বরফ জমা হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
তবে ঠিক কী কারণে ‘স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া’ অঞ্চলটি প্লুটোর বিভিন্ন মেরুর দিকে প্রবাহিত না হয়ে বিষুবরেখার কাছে অবস্থান করছে, তা বিজ্ঞানীদেরও ধাঁধার মধ্যে ফেলেছে।
গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে, প্লুটোর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ওই বস্তুটি সে জায়গায় অতিরিক্ত ভর ফেলে এসেছে, যা একে বিষুবরেখার কাছাকাছি থাকতে ভূমিকা রাখছে।
গবেষণা দলের অনুসন্ধানটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রনমি’তে, তবে তা প্লুটো’কে আরও ভালোভাবে বোঝার মতো যথেষ্ট নয়।