বিদ্যুৎ বিভাগে এক মাসে ১৮০ জনের বিদেশ সফর

রফিকুল বাসার:

ডলার সাশ্রয়ের জন্য কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়া কমাতে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। হামেশাই তারা বিদেশ যাচ্ছেন।  অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক মাসে শুধু বিদ্যুৎ বিভাগ থেকেই দেড় শতাধিক কর্মকর্তা বিদেশ সফর করেছেন।

ডলার সংকট যখন সামাল দেয়া যাচ্ছিল না তখন আমদানি কমানোসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগের অন্যতম ছিল সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ কমিয়ে আনা। কিন্তু সেই সাশ্রয় হয়নি। মন্ত্রণালয় সংস্থা কিম্বা রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানির পদস্থ কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত নানা কৌশলে নিয়ম এড়িয়ে বিদেশ যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে শুধু মে মাসে ১৮০ জন বিদেশ যাওয়ার অনুমতি নিয়েছেন। অনুমতি নেয়া অধিকাংশ কর্মকর্তা বিদেশ সফর করেছেন। আর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই বিভাগের ৫১২ জন কর্মকর্তা বিদেশ সফর করেন। একই সময় জ্বালানি বিভাগ থেকে বিদেশ গিয়েছেন ২৪০ জন। ভারত চীন জাপান যুক্তরাষ্ট্র থাইল্যান্ড ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন কর্মকর্তারা।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এই ছয় মাসে ১৩২ জন বিদেশে যেতে ছুটি নিয়েছেন। এর মধ্যে মার্চ এপ্রিল মে এই তিন মাসেই বেশি।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে বিদেশ যেতে অনুমোতি নিয়েছেন ২৫৬ জন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়েছেন ৮৭ জন। এর মধ্যে অনেকে লিয়েনে ছুটি নিয়ে গিয়েছেন। কেউ এক বছর কেউ এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। ছুটি নিয়েছেন ১০ দিন, ২০ দিন ৪০ দিন পর্যন্ত।

গত ছয়মাসে বেসামরিক বিমান চলাচল থেকে ৮০ জন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ৫০ জন; বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৩৪ জন; তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫৭ জন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি থেকে ৩০ জন বিদেশ গিয়েছেন। অন্যান্য মন্ত্রনালয়েও বিদেশ ভ্রমণের সংখ্যা কম নয়।

নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের মধ্যেই আগে থেকে সফর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে প্রকল্প খরচ বাড়ে। যদিও অনেক কর্মকর্তার দেয়া ছুটির নোটিশে বলা হয়েছে, তাদের পাওনা স্থানীয় মুদ্রায় দেয়া হবে।

তবে সরকারি অর্থে বা ঋণে নয় অনুদানের অর্থে এবং সরকারি অতি প্রয়োজনে কর্মকর্তরা বিদেশ যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্পের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ ৯০ ভাগ কমিয়ে এনেছি। অনুদানের অর্থে কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করছেন। এছাড়া যারা যাচ্ছেন তারা সরকারি অতি প্রয়োজনে যাচ্ছেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা না হলে এটা বন্ধ সম্ভব নয় বলে মনে করেন সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি  বলেন, এরজন্য কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা লাগবে। সদিচ্ছা না হলে বিদেশ যাওয়া বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের এখন বিদেশে অনেক সম্পদ। সেই সম্পদ পাহারা দিতে অনেকে মরিয়া হয়ে বিদেশ যাচ্ছেন।

আগে থেকেই সিদ্ধান্ত থাকলেও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর থেকে ডলার সাশ্রয় করা যায়নি বলে নতুন করে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি জারি করা পরিপত্রে সরকারি অর্থে সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, কর্মশালা ও সেমিনারে অংশ নেয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিপত্রটি সব মন্ত্রণলয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা, কর্পোরেশন ও সরকারি কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য।

সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারি তহবিল থেকে অতি জরুরি ছাড়া কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে ডলার দেয়া বন্ধ আছে। এজন্য সরাসরি প্রকল্পের মধ্যেই বিদেশ ভ্রমণ অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হচ্ছে।