নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে ১৪টি দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে ১৪টি দাবি উপস্থাপন করেছে জ্বালানি বিষয়ক নেটওয়ার্ক জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ – জেটনেট বিডি।

টেকসই ও ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য ৭৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করল জেটনেট বিডি।

বৃহস্পতিবার (২৬শে সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের লেক শোর হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই নেটওয়ার্কের আত্মপ্রকাশ করে। সেখানেই নাগরিক দাবি উপস্থাপন করা হয়।

পরে একশনএইড বাংলাদেশ’এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় ‘চাওয়া থেকে বাস্তবতা: বাংলাদেশের জ্বালানির ভবিষ্যত গঠন’ বিষয়ক সংলাপ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা এই আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে দাবি জানিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করার কথা বলেন বক্তারা।সরকারিভাবে অবহেলা করা হয়েছে বলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তারা।উদ্যোক্তারা সৌর যন্ত্রের উপর কর কমানো, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের অযৌক্তিক চুক্তি পর্যালোচনা করে নবায়ন করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান।

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি রূপান্তর করতে আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করে ছাদ ও পতিত জমিতে সৌর বিদ্যুৎ করাসহ ১৪টি নাগরিক দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম বলেন, রাজনৈতিক নয় বাস্তবতারভিত্তিতে পরিকল্পনা করতে হবে।

সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে বছরে পাঁচ শ’ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত একটা দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়েছে। সেই চক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আগামী দিনে কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যৎকেন্দ্র যাতে না হয় এবং বিদ্যমান প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুত অবসরে যায়–এই বিষয়ে সরকারকে কীভাবে পরামর্শ দেয়া যায়, তা বিবেচনা করে দেখতে হবে।

এই সম্মিলিত উদ্যোগের সাথে সরকারকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। দেশের জ্বালানি খাতে সুশাসন আনয়নে সরকারের সাথে নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সংলাপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জেটনেট-বিডি নিবেদিতভাবে কাজ করবে।

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস এর প্রধান বিশ্লেষক (জ্বালানি) শফিকুল আলম বলেন, মূল্যটা জানিনা বলে দরকষাকষির সময় ট্যারিফ বেড়ে যায়।

বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি স্পেশালিস্ট এমবুসো গওফিলা বলেন, সৌর বিদ্যুতের একচ্ছত্র প্রভাব থেকে সরে এসে স্থানীয় পর্যায়ে বায়োগ্যাস ও বায়োমাস নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আরও মনোযোগ দেয়া যেতে পারে।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খসরু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় প্রেক্ষাপটে ব্যবহারযোগ্য উদ্ভাবনমূলক প্রযুক্তি, যেমন ইলেকট্রিক রিকশার চার্জিং স্টেশন, সোলার মাইক্রো  গ্রীড, সোলার ইনকিউবেটর ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা ও প্রচার বাড়াতে হবে  এবং এই কাজে স্থানীয় নারী ও যুবকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সোলারিক গ্রুপের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী নাজনীন আক্তার বলেন, শিল্পখাতে যেখানে প্রতি ইউনিট ১১ থেকে ১২ টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, যেখানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে মাত্র ৩ থেকে ৪ টাকায় নিজ নিজ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

একশনএইড বাংলাদেশ-এর জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন (জেট) টিমের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই নেটওয়ার্ক নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রচার, সদস্য সংগঠনগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং নীতি-নির্ধারকদের প্রভাবিত করার মধ্য দিয়ে দেশে একটি টেকসই জ্বালানি রূপান্তর অর্জনে নিবেদিত থাকবে।