রাজধানীসহ সারাদেশে উদযাপিত পহেলা বৈশাখ
নিজস্ব প্রতিবেদক/বাসস, ঢাকা (সোমবার, ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫):
রাজধানীসহ সারাদেশে উৎসবের আমেজে উদযাপিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের সকল শ্রেণি পেশার-মানুষ একাকার হয়ে বরণ করে নিচ্ছে ১৪৩২ বাংলা বছরকে।
‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সুর এবং বাঙালির লোক গান, প্রদর্শনী, র্যালী, আল্পনা, নানা বর্ণের ফেষ্টুনে রঙিন হয়ে উঠে রাজপথ। নারী পুরুষ, শিশু কিশোর রং বেরঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে মেতে উঠেছে বর্ষবরণের আনন্দে। রমনার বটমূল থেকে শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট- প্রেসক্লাব, রাজপথ অলিগলি সবখানে ভোর থেকে উৎসবমুখর মানুষের পদচারণা। যেন জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। এ এক নতুন বাংলাদেশ।
পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে ভোরে রমনা বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন। সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়।
বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে।
দিনটিকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, তিন পার্বত্য জেলা এবং অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল রাজধানীতে শোভাযাত্রা বের করে।
এবারের বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের সকল নাগরিক, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কাছে অন্যরকম এক উৎসবের আবহ তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবারের মত দেশের সকল নাগরিক, সকল সম্প্রদায় ও নৃ-গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে আজ উদযাপন করছে সর্বজনীন উৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’ ।
এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ সেজেছে নতুন সাজে। বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রতীক এ দিনটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।
বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে উৎসবমুখর করে তুলতে বের হয় শোভাযাত্রা। বসেছে বৈশাখী মেলা। মেলাগুলোতে মেলে স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সব প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী, খেলনা এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন: চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারোহ। গ্রামে, নগরে বন্দরে বাঙালির আনন্দঘন লোকায়ত সংস্কৃতি মেলায় বসেছে নাগরদোলা, পুতুলনাচ, যাত্রা, লোকজ গানের আসর। এই বিনোদন বাঙালি সমাজের হাজার বছরের শাশ্বত রূপ।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মহানগর ও পৌরসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজস্ব কর্মসূচি পালন করছে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহসহ দেশের সব জেলা উপজেলায় উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির জাতিগত গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একই সাথে পালন করেছে বৈসাবি উৎসব। ঢাকায় জনসাধারণের জন্য সকল জাদুঘর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এদিন কোনো টিকিট লাগবে না।
সংবাদপত্রগুলোতে পহেলা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ফিচার প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্যান্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।