আধুনিক প্রযুক্তির কয়লা বিদ্যুতে দূষণ কমবে দুই ভাগ
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির (আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল) কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাত্র দুই শতাংশ পরিবেশের ক্ষতি কমানো সম্ভব। যদিও এই প্রযুক্তি ব্যবহারে খরচ হবে অনেক বেশি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রচলিত যন্ত্র ব্যবহারে যে পরিমান কয়লা ব্যবহার করা হয় তার থেকে মাত্র দুই শতাংশ কয়লা কম লাগে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে। আর যত টুকু কয়লা কম প্রয়োজন হবে ততটুকুই কার্বন কম পুড়েবে। তাতে দুষণও ঐ পরিমান কম হবে। তবে উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কয়লা পোড়ানোর পর যে ছাই হবে তার প্রায় সম্পূর্ণটাই সংরক্ষণ সম্ভব।
ভারতের সরকারি সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসির সিপাত এবং ভারতের দ্বিতীয় বড় চত্রিশগড়ের আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এই তথ্য জানা গেছে। এই দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্রই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্র।
গতসপ্তাহে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়। আদানি পাওয়ার লিমিটেড গুন্ডিয়া জেলার তিরোধায় অবস্থিত আদানি’র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা তিন হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ভারতের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (এনটিপিসি) ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরের সিপাত গ্রামে স্থাপন করেছে দুই হাজার ৯৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কেন্দ্র।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়লা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দুই শতাংশ কম কয়লা লাগছে বলে উৎপাদন খরচও ঐ পরিমান কম হচ্ছে। একইভাবে সম পরিমান দহৃষণ কম হচ্ছে। সমপরিমান ছাই কম হচ্ছে। ব্যবস্থাপনাও করতে হচ্ছে সমপরিমান কম কয়লার।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রর প্রকৌশলীরা জানান, আধুনিক প্রযুক্তিতে কয়লা থেকে তাপ তৈরি হওয়ার পর যে ছাই হয় তা বেশি মিহি হয়। ফলে এটি ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। এই সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছাই সংগ্রহ করা হয়। বাকী মাত্র দশমিক ০৩ শতাংশ ছাই চিমনির মাধ্যমে উড়িয়ে দেয়া হয়। অতি সামান্য পরিমাণ ছাই পুড়ে যায় বলে তা মানুষ বা গাছ-পালার কোন ক্ষতি করে না।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ব্যবস্থাপনা উল্পুত করার মাধ্যমে কয়লা পোড়ানোর পর যে ছাই হচ্ছে তার প্রায় সম্পূর্ণই সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে আশপাশের কোন গ্রামে ছাই এর প্রভাব পড়ছে না। সিমেন্ট, সিরামিকসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় এই ছাই কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকী দশমিক ০৩ শতাংশ ছাই চিমনি দিয়ে বাতাসের সাথে উড়ে যাচ্ছে। উচুঁ চিমনি থাকায় তা সংশ্লিষ্ট এলাকায় আর পড়ছে না।
ভারতের আইন অনুযায়ি চিমনি দিয়ে বাতাসের মাধ্যমে ছাই উড়ে যাওয়ার মাত্রা ঠিক করা আছে। এক এক দেশে এই মাত্রার পরিমাণ এক এক রকম। ভারতের আইন অনুযায়ি চিমনির মাধ্যমে এক কিউবিক মিটারে ৫০ মিলিগ্রাম ছাই থাকতে পারে। এর বেশি ছাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রর চিমনি দিয়ে বের হলে কেন্দ্রর উৎপাদন বল্পব্দ করার নিয়ম আছে। এই নিয়ম না মানায় অর্থাৎ চিমনি দিয়ে নিদি®দ্ব পরিমানের চেয়ে বেশি ছাই বের হওয়াতে তাদের কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভারতের পরিবেশ অধিদপ্তর ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করা হয়।
আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি কিউবিক মিটারের ২৩ মিলিগ্রাম ছাই বের হওয়ার নকশা করা হয়েছে। নকশা অনুযায়ি চিমনি দিয়ে ছাই বের হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কেন্দ্র পরিদর্শনশেষে কেন্দ্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট বনসি দে সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই এলাকায় অনেক গাছ আছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রর পক্ষ থেকে আরও গাছ লাড়ানো হয়েছে এবং হচ্ছে। এছাড়া এলাকাবাসীর সন্তানদের শিক্ষা চিকিৎসাসহ নানা সামাজিক কার্যক্রমে সহায়তা করা হচ্ছে।
কয়লা দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পড়ছে গড়ে আড়াই রুপি, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় তিন টাকা ৫০ পয়সা। দেশটির উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও মুম্বাইয়ে এই দুই কেন্দ্রর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
এনটিপিসি সিপাত সুপার থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ভিবি ফাদনাভিজ সাংবাদিকদের বলেন, এখানে কয়লার মজুদ রয়েছে, যার ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। দেশীয় কয়লার কারণেই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম হয়। কয়লার মান, আমদানি নাকি স্থানীয় ইত্যাদি বিষয়ের ভিত্তিতে উৎপাদন খরচ নির্ভর করে। আমদানি কয়লায় স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
সিপাত বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কয়লা পোড়ানো হয় তা থেকে দৈনিক ৮৫ হাজার টন ছাই হচ্ছে। ১১৬টি হপারের মাধ্যমে চাই ইয়ার্ডে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে ৩০ শতাংশ সিমেন্ট কারখানায় এবং ৭০ শতাংশ মাটি ভরাটও ইট বানানোর কাজে লাগানো হচ্ছে।
টিরোডা বিদ্যুতকেন্দ্রের স্টেশন হেড চৈতন্য প্রসাদ শাহো বলেন, সমস্ত ক্ষতিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পরিবেশ অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণও রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রর ওপর। কেউ যদি ছাই ব্যবস্থাপনা ভালভাবে না করে তবে সমস্যা তৈরী হবে। আর যদি সেটা করা হয় তবে কোন সমস্যা হবে না।