বিদ্যুৎ খাতের কাজে গতি নেই

বিদ্যুৎ খাতের কাজের গতি নেই। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন কিংবা উপকেন্দ্র  স্থাপন। কোন কাজই যতটা হওয়ার কথা ততটা হয়নি। এসব কাজে কোনটাতে অর্থ ছাড় হলেও তা খরচ করা যায়নি। কোনটার কাজ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক কোনটা মাত্র শুরু হয়েছে।
গত চার মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষ হয়েছে। তবু অনেক প্রকল্পে এখনও সরকারি অর্থ ছাড় হয়নি। আবার যেগুলোর জন্য অর্থ পাওয়া গেছে সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচির আওতায় বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ৬৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এরমধ্যে ২৮টি প্রকল্পের কাজই শুরু করতে পারেনি। ১০ ভাগের নিচে কাজ হয়েছে সাতটি প্রকল্প। যে প্রকল্পের লক্ষ্যপূরণ হয়েছে সেগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং সঞ্চালন লাইন নয়।
কোন কাজই হয়নি এমন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, রাস্তায় সৌর বিদ্যুৎ লাগানো, বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র,
সিটি কর্পোরেশনগুলোর রাস্তায় সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করা প্রকল্পের মাত্র চার দশমিক ২৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। কিন্তু করার কথা ছিল ২৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। এই কাজ করার জন্য এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ছাড়ও হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।
শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মাত্র জমি উন্নয়নের কাজ হয়েছে। অথচ ইতিমধ্যে পাঁচ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। যে টাকা ছাড় হয়েছে তার এক টাকাও খরচ করতে পারেনি গত চার মাসে।
টাকা ছাড় হলেও বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াটের তিন নম্বর প্রকল্পটিতে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সাত কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। কিন্তু তার এক টাকাও এখনও খরচ করতে পারেনি।
শাহজিবাজার ৩৫ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন হলেও কোন টাকা ছাড় হয়নি। ফলে কাজও হয়নি। একই অবস্থা বাঘাবাড়ি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট, এবং চাপাঁইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র দুই দশমিক ৬৮ ভাগ। খুলনা ও কুমিল্লয় প্রিপেউড মিটার লাগানোর কথা থাকলেও তার কোন কাজই হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও রাজশাহিতে পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম বাড়ানোর প্রকল্পেরও একটুও কাজ হয়নি।কথা ছিল বঙ্গভবন, গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১১ কেভি সুইচিং স্টেশন নির্মানের। কিন্তু তার কোন কাজ হয়নি।
আবার বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য এক টাকাও ছাড় না হলেও বলা হচ্ছে ২০ ভাগ কাজ শেষ।
অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর মোট ভৌত আগ্রগতি হয়েছে ২৫ দশমিক ৬৪ ভাগ।
দরপত্র আহবান প্রক্রিয়া ঠিক মত হয়না বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। কিছু কাজের জন্য বার বার দরপত্র আহবান করতে হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। সময় বেশি লাগছে। খরচও যাচ্ছে বেড়ে। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ( আরইবি) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এক কাজের জন্য কয়েকবার দরপত্র আহবান করতে হচ্ছে।
রোববার এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কাজের অগ্রগতি নেই বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। যিনি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন না তাকে বদলী করা হবে বলেও তিনি বৈঠকে জানান।  নসরুল হামিদ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের উদ্দেশ্যে বলেন, গত অক্টোবর পর্যন্ত চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার হতাশাজনক। যদি কজের গতি না বাড়াতে পারেন তাহলে প্রকল্প থেকে আপনাদের বাদ দেয়া হবে। নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প কাজ শেষ করতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য তদারকি বাড়ানো হয়েছে। পূন দরপত্র প্রক্রিয়া অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় নেয়। আগামী তিন বছরের মধ্যে সারা দেশের প্রি- পেইড মিটার সংযুক্ত করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ জনপ্রতি এক হাজার ওয়াট এবং ২০২৩ সাল নাগদ জনপ্রতি দুই হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে।