বিদ্যুৎ বিপর্যয়: ফ্রিকোয়েন্সি দায়ি
বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সি বা প্রবাহ গতি সমস্যার কারণে জাতীয় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল। নতুন ও পুরানোসহ বিভিন্ন পদ্ধতির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকায় এই প্রবাহ গতি কোথায় কিভাবে হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা যায়নি। তবে কারিগরি, ব্যবস্থাপনা এবং তদারকি এই তিনটি সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই সমস্যা না হয় সে জন্য নানা উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও থাকছে।
১ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে করা তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। প্রতিবেদনে এমনই তথ্য থাকছে বলে জানা গেছে।
কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রথমে গ্রিড লাইনে সমস্যা দেখা দেয়। পরে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। তারপর উৎপাদন ও সরবরাহের অনেক পার্থক্য তৈরী হয়। এরফলে পর্যায়ক্রমে একটার পর একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র সয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ অভ্যান্তরিণ কারণেই সেদিনের ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আধুনিক তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই। একই সাথে প্রত্যেকটি বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) অনুযায়ি সময় নির্ধারণেরও ব্যবস্থা নেই। ফলে এক কেন্দ্রের ঘড়ির সাথে অন্য কেন্দ্রের পার্থক্য তৈরী হয়। তথ্য সংরক্ষণ ও জিপিএস সুবিধা না থাকায় দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনার নির্দিষ্ট কারণ উদঘাটন করা যায়নি। আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণে ঘটনা ঘটলেও কোন স্থান থেকে এর সূত্রপাত তা বের করা যায়নি।
এদিকে কমিটি দেশের মোট উৎপাদনের ১০ ভাগের বেশি এক সাথে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি না করার সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, দুএকদিনের মধ্যেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কোন কিছুই গোপন করা হবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটির আহবায়ক ড. আহমদ কায়কাউয়াস বলেন, সকল তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমেরিকাসহ কয়েকটি বড় বড় দেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণও পর্যালোচনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ি ভবিষ্যৎ গঠনের সুপারিশ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সূত্র জানায়, দেশের কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নতুন। কিছু কেন্দ্র আছে অনেক পুরাতন। এজন্য সেখান থেকে সুক্ষ বিদ্যুৎ প্রবাহ বা ফ্রিকোয়েন্সি তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য মূল কোথা থেকে সমস্যার উদ্ভব তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। দেশের পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রর একটিরও আধুনিক তথ্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেই। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কখন কোনটা কত মেগাওয়াট উৎপাদন করে বা কোনটা বন্ধ হয়ে যায় তার সময়সীমা হাতে হাতে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
সেদিন যা ঘটেছিল
চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভেড়ামারা হাইভোল্টেজ ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে ১ নভেম্বর বেলা ১১টা ২৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে। এর ১৪ সেকেন্ড পর দেশে বিপর্যয় নেমে আসে। এই ঘটনা ঘটেছে মাত্র ৫ মিলি সেকেন্ডে। এরফলে ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়।
সুপারিশ
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পর্যায়ক্রমে দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা, কারিগরি সব ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ডিজিটাল করার পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়নে সুপারিশ করা হয়েছে। একজন উপসচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যর একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সুপারিশ মানছে কি না তা দেখভাল করবে এই কমিটি।
আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি রিলের উন্নয়ন করা, জেনারেশন ইউনিট এবং ফিডারের ফ্রিকোয়েন্সি রিলের মধ্যে সমন্বয় করা, আগের গ্রিড বিপর্যয়ের পর করা সুপারিশ বাস্তবায়ন, এনএলডিসির সফটঅ্যায়ার প্রতি পাঁচ বছর পর পর আধুনিকায়ন করা, সফটঅ্যায়ারে প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে এক মিলি সেকেন্ডে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নির্ধারণ করা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, এনএলডিসিতে সিসি ক্যারেরার ব্যবস্থা করা, জিপিএস টাইমারের ব্যবস্থা করা, প্রত্যেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ডিজিটাল রেকডিং প্রথা চালু করা, প্রত্যেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুচরা যন্ত্রাংশ প্রস্তুত রাখা, জোন ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাগ করার ব্যবস্থা রাখা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে অভ্যন্তরীন ব্যবস্থা চালু রাখতে নিজস্ব জেনারেটর রাখার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হচ্ছে প্রতিবেদনে। এরমধ্যে কিছু সুপারিশ রয়েছে স্বল্প মেয়াদী আর কিছু দীর্ঘ মেয়াদী।
বর্তমান ব্যবস্থা পর্যালোচনা
হাতে হাতে কিংবা ফোনে ফোনে কথা বলে সিদ্ধা্ন্ত নিতে হয়। এতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সময় চলে যায়। এনএলডিসির মতো গুরুত্বপূর্ন স্থাপনায় নিরাপত্তার জন্য কোন সিসি ক্যামেরা নেই।