শ্যালা নদীকে দুর্যোগপ্রবণ ঘোষণার দাবি

সুন্দরবনে তেল তুলে নেয়ার পরিবর্তে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। সেখানের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে বৈজ্ঞানিক কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তেল ছড়িয়ে পড়ায় নষ্ট হচ্ছে বনের ইকোসিস্টেম।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়। বাপা শ্যালা নদীর ঐ এলাকাকে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে ঘোষনা দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
বাপার ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সুন্দরবনে দুর্ঘটনাস্থল সরেজমিন ঘুরে এসে ‘শ্যালা নদীতে তেল ট্যাংকার দুর্ঘটনা: বিপর্যস্ত সুন্দরবনের পরিবেশ, বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করে। এসময় বাপা সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিন, কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাপা’র যুগ্মসম্পাদক শরীফ জামিল,  সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এটি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ নয়, মানুষের সৃষ্ট দূর্যোগ। গত ৫০ বছরের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বনাশা দূর্যোগ। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেনি। আব্দুল মতিন বলেন, এর প্রভাবে প্রাথমিকভাবে অমেরুদণ্ডী প্রাণী ও ছোট গাছ মারা যাবে। পরে ধীরে ধীরে বড় গাছ মারা যাওয়ার পাশাপাশি গাছ উৎপাদন কমে যাবে। তিনি বলেন, আমরা বিশেষজ্ঞ নিয়ে বসে আছি, অথচ সরকার অন্যের সাহায্য নিতে চায় না।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হলো, অবিলম্বে সুন্দরবন ও ট্যাংকার ডুবির আশেপাশের এলাকাকে জরুরী দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষনা, স্বাস্থ্য-ঝুঁকিপূর্ণ তেল অপসারণ কাজে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার না করে সংগঠিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা, বন ও পরিবেশবান্ধব দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয় জনগনের পরামর্শ নিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তেল ছড়ানো বন্ধ ও তা অপসারণের পদক্ষেপ নেয়া, শ্যালা নদীর নৌপথ স্থায়ী ভাবে বন্ধ করতে হবে, দ্রুত ঘসিয়াখালী নৌপথ পুণঃখনন ও চালু করতে হবে, একই প্রকার দূর্ঘটনার সম্ভাবনাপূর্ণ সকল প্রকল্প যেমন: রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ওরিয়ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সরকারী সাইলো গুদাম নির্মান, বনের জমি ক্রয়-বিক্রয়-লীজ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে,  বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশকর্মীদের সমন্বয়ে পরিবেশসম্মত ‘সুন্দরবন ব্যবহার বিধি’ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সেখানে কোন সংঘটিত বিজ্ঞান নির্ভর তৎপরতা চোখে পড়েনি। শুধু অকুস্থল জয়মনির ঘাট ও তার প্রায় ১০ কিলোমিটার এর মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনিক ৯০০ টাকার বিনিময়ে একটি নৌকা ও দুইজন লোক নিয়ে যে সমস্ত গুল্ম ও ছোট বৃক্ষের গায়ে তেল লেগে আছে তা নির্বিচারে কেটে নিয়ে নৌকা ভরে নিয়ে আসা এবং আচ্ছাদিত অসংখ্য খালসমুহে কাঁদামাটি পা দিয়ে মাড়িয়ে তেলের চিহ্ন মুছে ফেলা হচ্ছে। পানিতে প্রায় সকল জায়গায় তেল ভাসতে দেখা যায়। তবে বিস্তীর্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ায় তার ঘনত্ব কম। লক্ষনীয় যে, এতে ক্ষতির ধরণের ভিন্নতা থাকলেও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা বিস্তৃতি লাভ করেছে। ভরা পূর্ণিমায় শক্তিশালী জোয়ারে তেল বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে এবং কোথায়ও কোথায়ও শ্বাসমূলগুলো তেলের আস্তরনে ঢাকা পড়েছে। ভিতরে অপেক্ষাকৃত নিন্মাঞ্চল ও খালে তেলের অস্তিত্ব চোখে পড়ে। মৃত কাঁকড়া চোখে পড়লেও জীবন্ত কোন জলজ প্রাণী ও পাখির অস্তিত্ব অকুস্থল ও তার চারপাশে দেখা যায়নি।