শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার
প্রায় দেড় বছর পর শিল্পগ্রাহকদের নতুন করে গ্যাস সংযোগ দিতে দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে লোড বাড়ানো এবং নতুন সংযোগ পেতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে প্রায় ৮০০ আবেদন জমা আছে। এসব আবেদন থেকে বাছাই করে সংযোগ দেয়া হবে। আগামী মাস থেকেই নতুন সংযোগ অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। তবে নতুন কোন ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্প কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ জেনারেটর) সংযোগ দেয়া হবে না।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মাস থেকে শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে দৈনিক ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ার কথা রয়েছে। এ গ্যাস একাধিক বড় বিদ্যুেকন্দ্রের পাশাপাশি শিল্পে ব্যবহার করা হবে। নতুন বিনিয়োগ উত্সাহিত করতেই শিল্পে সংযোগের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা। শিল্প খাতে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও রফতানি আয়ের বিষয়টি বিবেচনা করে শর্তসাপেক্ষে গ্যাস সরবরাহের এ সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আগামী মাসের শেষ দিকে শিল্পে ব্যবহূত বয়লারের জন্য নতুন সংযোগ দেয়া শুরু হবে। পাশাপাশি পুরনো বয়লারের লোড বৃদ্ধি করা হবে। তবে কোনো অবস্থায়ই ক্যাপটিভ সংযোগ দেয়া হবে না। প্রতিটি সংযোগের আগে গ্রাহকের তথ্য ও কারখানা এলাকা ভালোভাবে যাচাই করে দেখা হবে।
জানা যায় তীব্র গ্যাস সংকট সামাল দিতে ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে সিলেট অঞ্চল ছাড়া সারা দেশে নতুন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্পে সংযোগ দিতে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির আহ্বায়ক ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালে প্রায় ২০০ শিল্প সংযোগ দেয় এ কমিটি। যদিও তার আগের তিন বছরে দেয়া হয়েছে মাত্র ৪৫টি সংযোগ।
এদিকে সংযোগ অনুমোদনে বিভিন্ন মহলের সুপারিশ বিবেচনায় নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেক গ্রাহক আবেদনের পর কয়েক বছর অপেক্ষা করেও সংযোগ পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ কয়েকটি গ্রুপের উদ্যোক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে চাহিদাপত্রের টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষা করছি। নতুন সংযোগ পাওয়া তো দূরের কথা, পুরনো সংযোগে লোড বৃদ্ধির অনুমোদনও পাচ্ছি না। তাদের আবেদন কমিটির বিবেচনায় আসছে না।’ সংযোগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণের আহ্বান জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ব্যাংকঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে বসে আছেন অনেক উদ্যোক্তা। গ্যাস সংযোগের জন্য তাদের আবেদনও কয়েক বছর ধরে পড়ে আছে। এসব গ্রাহককে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। শুধু তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাভুক্ত এলাকায় গ্যাসের ঘাটতি আছে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ কোটি ঘনফুট। নতুন আবেদনের অধিকাংশই তিতাসের আওতাধীন রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়। এর বাইরে চট্টগ্রাম এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছে কর্ণফুলী গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
বর্তমানে ২৮০ থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২৪০ কোটি ঘনফুট। বিবিয়ানা সম্পসারণ প্রকল্প চালু হলে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াবে ২৭০ কোটি ঘনফুট।