১লা ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হতে পারে
১লা ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন বিদ্যুতের দাম কার্যকর হতে পারে। সোমবার বিদ্যুতের নতুন দাম নির্ধারণ নিয়ে গণশুনানী শুরু হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রায় দেয়া হবে। কিন্তু কার্যকর হবে ১০ আগে থেকেই। এদিকে সাধারণ গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা জ্বালানি তেলের দাম কম থাকার কারণে এখন বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উপর গণশুনানী শুরু করেছে। ২৫ জানুয়ারি শুনানী শেষ হবে। শুনানীতে পিডিবি দাম বাড়ানোর পক্ষে এবং ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পক্ষ থেকে দাম না বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়।
শুনানী শেষে বিইআরসি সদস্য সেলিম মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, সকল শুনানী শেষ করে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রায় দেয়া সম্ভব হবে। ১০ ফেব্রুয়ারি রায় দেয়া হলেও তা কার্যকর করা হতে পারে ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে। আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ সকল বিষয় বিবেচনা করে বিদ্যুতের নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে। এতে ভোক্তার স্বার্থ পুরোপুরি দেখা হবে।
সোমবার টিসিবি মিলনায়তনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের উপর গণশুনানী হয়। শুনানীতে বিইআরসি কারিগরি মহৃল্যায়ন কমিটি পাইকারি বিদ্যুতের দাম পাঁচ দশমিক ১৬ শতাংশ বা প্রতি ইউনিট চার টাকা ৬৫ পয়সা দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। পিডিবি গড়ে ১৮দশমিক ১২ শতাংশ বা ইউনিট প্রতি পাঁচ টাকা ৫১ পয়সা করে দাম নির্ধারণের প্রস্টøাব করেছিল।
বিইআরসি’র চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, রহমান মুর্শেদ, মাকসুদুল হকসহ অন্যরা শুনানীতে উপস্থিত ছিলেন। পিডিবির পক্ষে প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ, কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, বিজিএমইএ সেক্রেটারি কাজী শামসুল আলমসহ বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানি, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা শুনানীতে গ্রাহকদের পক্ষে অংশ নেন।
প্রস্তাব অনুযায়ি ডিপিডিসির ১৩২ কেভির জন্য প্রতি ইউনিট ছয় টাকা ২৯ পয়সা ও ৩৩ কেভির ছয় টাকা ৩৮ পয়সা, আরইবির ১৩২ কেভি ছয় টাকা ২৯ পয়সা ও ৩৩ কেভি চার টাকা ৭৬ পয়সা, ডেসকো’র ১৩২ কেভি ছয় টাকা ২৯ পয়সা ও ৩৩ কেভি ছয় টাকা ৩৮ পয়সা এবং ওজোপাডিকো এর ১৩২ কেভি ছয় টাকা ২৯ পয়সা ও ৩৩ কেভি পাঁচ টাকা ২৩ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে পাইকারি বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি উৎপাদন ও সরবরাহ খরচ পড়ছে ছয় টাকা ৫৪ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ইউনিট প্রতি চার টাকা ৬৭ পয়সা।
গ্রাহকদের পক্ষে শুনানীতে বলা হয়, তেলের দামের নিন্মগতি হিসেবে আনা হয়নি। পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ালে খুচরা বিদ্যুতের দামও বাড়বে। এতে সামগ্রিক অর্থনীতি ও জনজীবনে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
পিডিবির প থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও পিডিবিকে আগের দামের তেল কিনতে হচ্ছে। বিপিসি দাম কমায়নি। ফলে পিডিবি আগের দরেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তেলের দাম কমার সুফল বিদ্যুৎ উৎপাদনে পৌছাচ্ছে না।
গ্রাহকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার পরও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যৌক্তিক নয়। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তা সাধারণ মানুষের দৈনন্দির জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে।
নতুন দাম নির্ধারণের বিষয়ে আরও কোন পর্যবেক্ষণ থাকলে তা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে কমিশনে লিখিত ভাবে জমা দেয়া যাবে। বুধবার সকাল ১০টায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সঞ্চালন মাশুলের ওপর এবং দুপুর ২ টায় ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) খুুচরা দাম বাড়ানোর ওপর শুনানী হবে।
এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর গণশুনানি চলাকালে বাইরে এর প্রতিবাদে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে গণতাতান্ত্রিক বাম মোর্চা। বাম মোর্চাভূক্ত বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রীক আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গণঅবস্থানে অংশ নেন।