কয়লা নিয়ে সংশয়ে উদ্যোক্তারা
আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে কয়লার যথাযথ নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। কোন কোন দেশ বাংলাদেশে কয়লা রপ্তানি করতে চাইলেও পাঁচ বছরের বেশি নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। এ কারণে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ ঝুঁকিতে আছে।
রোববার বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য কোল ক্লাব গঠন বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পিডিবির চেয়ারম্যান আবদুহু রুহুল্লাহ, পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেনসহ বিভিন্ন কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মত বিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, পাঁচ বছরের বেশি কোনো দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে কয়লা সরবরাহের চুক্তি করতে চাচ্ছে না। কয়লার উৎস ছাড়াও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অর্থ সংস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় গ্যাসের পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০২১ সালের ভিশন বাস্তবায়নে আমদানি করা কয়লা দিয়ে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ভারতের সাথে যৌথ কোম্পানি করে রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, চিনের সাথে যৌথ কোম্পানি করে কক্সবাজারের মহেশখালিতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটসহ দেশীয় কয়েকটি কোম্পানি আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করেছে। এইসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে কয়লার প্রয়োজন তা কোথা থেকে আসবে এবং কিভাবে এ কয়লা আনা হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
সভায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে গঠিত বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভিএস তা¤্রকার বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লা আছে। বাংলাদেশে কয়লা আমদানি করার সুযোগও আছে। কিন্তু কোনো দেশই পাঁচ বছরের বেশি সময়ের জন্য কয়লা সরবরাহের চুক্তি করতে চাচ্ছে না। অরিয়ন গ্রুপের কয়লা উন্নয়ন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১০ বছরের জন্য চুক্তি করার কথা বলা হলেও কোনো দেশই পাঁচ বছরের বেশি কয়লার নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।
তবে অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন আমদানি করা কয়লার অভাব নেই। তিনি বলেন, বিশ্বের ৩২ শতাংশ কয়লা এশিয়াতে আছে। ফলে কয়লা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ চাইলেই কয়লা পাবে। এককভাবে কাজ করলে কাজ এগিয়ে নেয়া কঠিন। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে সব কাজ সহজে করা সম্ভব। তিনি জানান, কয়লার জন্য আলাদা টার্মিনাল করা হচ্ছে। তিন বছরের মধ্যে দৃশ্যমান কিছু দেখার জন্য সরকার কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নকশা, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোম্পানি নির্বাচন ইত্যাদি সঠিক এবং গ্রহণযোগ্যভাবে হলে অর্থ সংস্থান নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করার জন্য আলোচনা করতে আমন্ত্রন জানিয়েছে বলে তিনি জানান।
বিদ্যুৎ সচিব বলেন, বাংলাদেশের জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জরুরী। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি উন্নয়নের কাজ শেষ। ওনার্স ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।