সবার ঘরে বিদ্যুৎ দিতে এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা লাগবে
সবার ঘরে বিদ্যুৎ দিতে এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এতে সঞ্চালন, বিতরণসহ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আগামী পাঁচ বছরে বিদ্যুৎখাতে এই বিনিয়োগ করতে হবে।
শনিবার বিদ্যুৎ ভবনে ‘প্রকল্প ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। সকালে কর্মশালার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম। বিকালে সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই অনুষ্ঠানেই সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম। সমাপনি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এস এম গোলাম ফারুক। কর্মশালায় বিদ্যুৎ সংস্থা ও কোম্পানির প্রধানরা ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারা যোগদেন।
কর্মশালা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎখাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তে বরাদ্দ প্রয়োজন হবে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছর যা আছে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর এই ছয় বছরের মোট এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎখাতের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে এই ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫৪০ মেগাওয়াট। গ্রাহক সংখ্যা হয়েছে ৬২ লাখ। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বেড়েছে ২০ শতাংশ। বর্তমানে ১০০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। এরমধ্যে ৪২টি সরকারি, যার উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ৫৫৪ মেগাওয়াট আর ৫৮টি বেসরকারি, যার উৎপাদন ক্ষমতার পাঁচ হাজার ১২ মেগাওয়াট। এরমধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হয় ক্যাপটিভ থেকে।
সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। চ্যালেঞ্জ গুলো হলো, জমি অধিগ্রহন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া, প্রকল্পের জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ পেতে দেরি, দরপ্রস্তাব তৈরীতে দেরি হওয়া, আইনগত পর্যালোচনা, ঠিকাদারের নির্দিস্ট সময়ে কাজ শেষ না করা, দক্ষ জনবলের অভাব এবং যথাসমেয় প্রকল্প অনুমোদন।
তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে বিদ্যুৎখাতের সবাইকে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সময়ের দিকে মনোযোগী হতে হবে। কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো যাতে সঠিকভাবে নির্ধারিত সময়ে বাসÍবায়ন করা যায়, সেজন্য সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ, জবাবদিহি থাকা জরুরী। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিতে হবে। প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুত অনুমোদন পায় সে ব্যবস্থা করা হবে। তবে নির্ধারিত সময়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব সবারই। তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশেই যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্লোথ গতি তখন বাংলাদেশে উন্নতির দিকে। সুযোগ করে দিলে এই উন্নয়ন আরও হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকার কোন অভাব হবে না বলে তিনি জানান। গোলাম ফারুক বলেন, দেশের সম্পদ সীমিত। তাই এর সদব্যবহার জরুরী। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বিদ্যুতের ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ন। এখাতে স্বচ্ছতা আনতে হবে। মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎখাতের জন্য এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যে, বর্তমানে প্রায় প্রতিমাসেই একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছর ২৮টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে ১৬ সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধিন আছে। এগুলো থেকে মোট চার হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে বেসরকারি উদ্যোগে আরও ১১টি কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। যা থেকে মোট এক হাজার ৯১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে।
অনুষ্ঠানে পিডিবি চেয়ারম্যান কে এম হাসান, বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব শেখ মো. আব্দুল আহাদ, পিজিসিবি আশুগঞ্জ-ভুলতা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প পরিচালক কাজী ইসতিয়াক হাসান বক্তৃতা করেন।