বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যেখানে কমে গেছে, সেখানে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। ঠিক এ সময় মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনে সঙ্কট বাড়বে। এ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
শনিবার বেলা ১১টায় পুরানাপল্টন মোড়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার দেশের ১৬ কোটি মানুষকে ইলেকট্রিক শক দিয়েছে।’
শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পল্টন থানার উদ্যোগে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বন্ধ, জনজীবনের সঙ্কট দূর ও যানজট এবং জলজট মুক্ত ও অচল ঢাকা সচল করে সাধারণ জনগণের বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ তিনি এ মন্তব্য করেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে যেখানে তেলের দাম কমেছে, সে কারেণ বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমেছে। তাই দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। সরকার অযৌক্তিকভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে ইলেকট্রিক শক দিয়েছে সরকার।’ তিনি সরকারকে আমলা, অসৎ ব্যবসায়ী বান্ধব না হয়ে জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানান।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক-অগ্রহণযোগ্য ও গণবিরোধী হিসেবেও আখ্যায়িত করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। সমাবেশ সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, ‘এই সরকারের নির্বাচিত হতে জনগণের ভোট লাগে না, তাই দাম বাড়াতে জনগণের মতামতেরও তোয়াক্কা করে না। এই সরকার আইএমএফ বিশ্বব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে জনগণের ঘাড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি চাপিয়ে দেয়।’ তিনি এই গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘গতকাল প্রতিমন্ত্রী বলেছেন- আবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়বে। তাহলে বিইআরসি’র কার্যকারিতা কী? গণশুনানির নামে নাটক কেন?’
এ অবস্থা চলতে থাকলে তিনি বিইআরসি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গণবিরোধী মানুষকে মন্ত্রী হিসেবে দেশবাসী দেখতে চায় না। গৃহস্থলিতে বেশি গ্যাস ব্যবহার করে আমরা কম দাম দেই, এটি মিথ্যা তথ্য। বরং গড়ে আমরা কম গ্যাস ব্যবহার করে বেশি দাম দেই।’
পল্টন থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল, পল্টন থানা কমিটির নেতা মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, ত্রিদিব সাহা প্রমুখ।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবির ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল।
গণফোরাম : বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শুক্রবার বিকালে দলটির কার্যালয়ে এক সভায় তিনি বলেন, সমসাময়িক কালে শিশু হত্যা, খুন, ক্রসফায়ার বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এরই মধ্যে সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক দিন আগেই এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গণশুনানি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করার। কিন্তু হঠাৎ করেই সরকার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য যেখানে কমে গেছে সেখানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না।
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শোষণ-দুর্নীতি পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে। আজ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকার পাহাড় করা হচ্ছে। এ সরকার অবৈধ সরকার বলে এসব অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ : জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিল, বাংলাদেশ নারী মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি ফাতেমা খাতুন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক কেন্দ্রের সভাপতি হুমায়ুন কবির যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ালে গরিব মানুষের অর্থ উপার্জনের ওপর আঘাত আসে। তাদের জীবিকার ওপর প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, কোনোরকম যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি এ ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম অর্ধেকেরও নিচে নামার ফলে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম কমার কথা। জ্বালানি তেলের দাম না কমিয়ে উল্টো বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সরকার জনস্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
এনপিপি : ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু ও মহাসচিব আবদুল হাই ম-ল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, পৃথিবীব্যাপী জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম যখন ব্যাপকভাবে কমছে তখন সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বাসদ (মার্কসবাদী) : বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বাসদ (মার্কসবাদী) ঢাকা মহানগর সংগঠক ফখরুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তারা বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মহাজোট সরকারের চরম স্বৈরতান্ত্রিক ও গণবিরোধী চরিত্রের পরিচায়ক। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। ঠিক এ সময় মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনে সঙ্কট বাড়বে। এ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এনডিবি : নতুনধারা বাংলাদেশ- এনডিবির চেয়ারম্যান মোনি মেহেদী বলেছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে আবারও দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করল সরকার। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম সব অন্যায় আর অপরাধের রাজনীতিকে না বলতে তৈরি হচ্ছে। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।