রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ তদারকিতে স্টিয়ারিং কমিটি
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম তদারকিতে ২৪ সদস্যর একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করছে সরকার। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দরপত্র আহ্বানের পর দুই দফা সময় বৃদ্ধির মধ্যে ওই স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হলো। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ওই স্টিয়ারিং কমিটিতে রাখা হয়েছে। কোন জায়গায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজ যাতে আটকে না থাকে এ জন্যই বিদ্যুৎ বিভাগ সম্প্রতি ওই কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে কার্যপরিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে রামপাল বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে রামপাল বিষয়ে দেশীয় পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করে এমন কিছু এনজিও নেতিবাচক প্রচারণায় যোগ দিয়েছে। এতে করে রামপালের অর্থায়ন থেকে শুরু করে ভাল ঠিকাদার পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে। যদিও ভারত এবং বাংলাদেশ প্রকল্পটিতে বাস্তবায়নের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয় হবে বলে দেশের পরিবেশবাদীরা নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশী বিভিন্ন ব্যাংক অনেকটা উপযাজক হয়ে রামপালে বিনিয়োগ করবে না এমন বিবৃতি দিয়েছে। যদিও এইসব ব্যাংক কোন দিনই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেনি। তবুও ওই ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্তের প্রভাব অন্য বিনিয়োগকারীদের ওপর পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ব্যাংক ঋণের ওপর এক ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ কোম্পানিকেও ভাবিয়ে তুলেছে।
অন্যদিকে ১৫ ফেব্রুয়ারি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। প্রায় তিন মাস সময় দিয়ে ১৮ মে দরপত্র জমার শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়। পরে সময় বাড়িয়ে তা ১৮ জুলাই করা হয়। কিন্তু তারপরও যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যায়নি। অনেক কোম্পানিই দরপত্র জমা দেয়ার জন্য আরও সময় চাইছে। এ জন্য দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
রামপাল প্রকল্প সূত্র জানায়, ভারত, চীন এবং কোরিয়ার কয়েকটি কোম্পানি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপান আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তারা দরপত্র জামা দেয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় চাইছে। এর মধ্যে ভারতের দুটি কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের কোম্পানি দরপত্র কিনেছে। যদিও ভারতের কোম্পানিরই কেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহ বেশি। তবে এই বিনিয়োগের বেশিরভাগ ভারত এবং চীন থেকে পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন দাতাসংস্থা রামপালের নেতিবাচক প্রচারণায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। উপরুন্ত কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দাতাসংস্থার বিনিয়োগ পাওয়া কষ্টকর বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ দক্ষিণ করিয়াতে রামপালে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে রোডশো করার পরিকল্পনা করেছিল। পরে অবশ্য সেখানের বিনিয়োগকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সময় না পাওয়ায় পরে তা বাতিল করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত রামপাল স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এবং সিনিয়র সহকারী সচিবকে (উন্নয়ন-২) কমিটিতে রাখা হয়েছে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়াও সংশ্লিষ্ট আরও ছয়টি বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে।
কমিটিতে পিডিবির চেয়ারম্যান ছাড়াও আরও ছয়জন রয়েছে পিডিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। অন্যরা হলেনÑ পিডিবির সদস্য কোম্পানি এ্যাফেয়ার্স, কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক, পরিচালক আইপিপি সেল-১, প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন), প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল)। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক এই দুজনকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে।
এছাড়া সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিয়োগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের নির্বাহী পরিচালক, সদস্য প্রকৌশল মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ সড়কের প্রকল্প পরিচালক রয়েছে ওই কমিটিতে।
কমিটির তিনটি কার্য এলাকা নির্ধারণ করে বলা হচ্ছে অন্তত প্রতি দুই মাসে একটি সভায় মিলিত হতে হবে সমস্যদের। সম্মিলিতভাবে কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা ও বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রদান, প্রকল্প বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান ছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ মনিটরিং এবং প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে এই কমিটি।