বার বার সুন্দরবনে আগুন: তদন্ত কমিটি করে কাজ হচ্ছে না

আবারও সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত দুইমাসে চারবার সুন্দরবনে এই ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একের পর এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এসব কমিটির সুপারিশ  কোনো কাজে লাগছে না।
সর্বশেষ গত বুধবার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নাম্বার কম্পার্টমেন্টের তুলাতলায় আগুন লাগে।আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়। এর আগে ১৮ এপ্রিল সকালে পূর্ব সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্পের আবদুল্লাহর টিলা এলাকায় আগুনের সূত্রপাত হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভান। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দাকে আটকও করেছে পুলিশ।
এর আগে ২৭ মার্চ এবং ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনে আগুন লেগে নাংলি, আব্দুলাহর টিলা, পঁচাকুড়ালিয়ে ও নাপিতখালী এলাকার প্রায় ১০ একর বনভূমি পুড়ে যায়।
গত ১৩ এপ্রিলের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামীরা প্রতিশোধ নিতে এ অগ্নিকান্ড ঘটিয়েছে বলে বনবিভাগ ও গ্রামবাসী অভিযোগ করেছে।
এ ঘটনায় চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, এসব এলাকার শিকারীদের নেতৃত্বে একটি মৎস্য শিকারি চক্র প্রতিবছর বনে আগুন লাগিয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে তারা আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে মাছের বিল তৈরি করে। বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব। কারেন্ট জাল পেতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়।
এ বিষয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল হান্নান বলেন, নানা কারণে বনের মধ্যে আগুন লাগতে পারে। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। খুব শিগগির তাদের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এরপরই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনায় যেসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের অনেকেই নানা ধরনের সুপারিশ করেছে। কিন্তু বাস্তবে এসব সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে তার প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি বলে সূত্র জানায়।
২০১৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালী ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত পয়ষট্টি ছিলা এলাকায় বনে আগুন লেগে অন্তত পাঁচ একর বনভূমি পুড়ে যায়। ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় পোড়ে দুই একর বনভূমি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ গঠনের পর থেকে এই এলাকায় অন্তত ২০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৬০ একরেরও বেশি বনাঞ্চল পুড়ে যায়। তবে বেসরকারি হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিমাণ আরও অনেক বেশি। এর মধ্যে শুধু চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায় অন্তত ১৪টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা জানান, এ মৌসুমে মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে বনে আসে। চাক ভাঙার সময় তারা আগুন ব্যবহার করে। সেখান থেকেও অনেক সময় বনে আগুন ছড়িয়ে থাকতে পারে। আবার বনের মধ্যে পচা পাতা থেকে তৈরি হওয়া মিথেনের স্তর জমে গেলে বনজীবীদের বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও আগুন লাগার সুযোগ আছে।