দেশের ১৯ শতাংশ প্রাণি বিলুপ্তির হুমকিতে

বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির ১৯ শতাংশই ‘বিলুপ্তির হুমকিতে’ আছে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা আইইউসিএন-বাংলাদেশ।

বুধবার বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিভাবে প্রকাশিত হয় প্রাণিকূলের ‘হালনাগাদ প্রজাতির লাল তালিকা- ২০১৫’। এতে এ শঙ্কা ফুটে ওঠে।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে আইইউসিএনের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ।

স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, স্বাদু পানির মাছ, চিংড়ি ও প্রজাপতির ১৬১৯টি প্রজাতির মধ্যে ৩৯০টি-ই কোনো না কোনোভাবে হুমকির মুখে আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

যেসব প্রজাতির তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে আছে, ১৩৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৬৬ প্রজাতির পাখি, ১৬৭ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪৯ প্রজাতির উভচর, ২৫৩ প্রজাতির মাছ, ১৪১ প্রজাতির চিংড়ি প্রজাতি ও ৩০৫ প্রজাতির প্রজাপতি।

“এর মধ্যে অতি বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে ৫৬টি প্রজাতি, বিপন্ন ১৮১ প্রজাতি আর সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে ১৫৩টি প্রজাতি।”

সাত ক্যাটাগরির ৩১ প্রজাতি এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “এ ছাড়া সংকটাপন্ন ৩০৯ প্রজাতি বিলোপের হুমকিতে রয়েছে। হুমকির মুখে আছে ৯০টি।”

৮০২টি প্রজাতি ঝুঁকিতে নেই বলে জানান সচিব কামাল উদ্দিন।

এর আগে ২০০০ সালে প্রথমবার প্রাণিকূলের অবস্থা নিয়ে ‘লাল তালিকা’ করা হয়।

হালনাগাদ তথ্য
বিলুপ্ত ৩১ প্রজাতি: স্তন্যপায়ী ১১, পাখি ১৯, সরীসৃপ ১।
অতি বিপন্ন ৫৬ প্রজাতি: স্তন্যপায়ী ১৭, পাখি ১০, সরীসৃপ ১৭, উভচর ২, মাছ ৯ ও প্রজাপতি ১। মোট ৫৬টি প্রজাতি।
বিপন্ন ১৮১ প্রজাতি: স্তন্যপায়ী ১২, পাখি ১২, সরীসৃপ ১০, উভচর ৩, মাছ ৩০, চিংড়ি ২, প্রজাপতি ১১২।
ঝুঁকিপূর্ণ ১৫৩ প্রজাতি: স্তন্যপায়ী ৯, পাখি ১৭, সরীসৃপ ১১, উভচর ৫, মাছ ২৫, চিংড়ি ১১ ও প্রজাপতি ৭৫।
হুমকির কাছাকাছি ৯০ প্রজাতি: স্তন্যপায়ী ৯, পাখি ২৯, সরীসৃপ ১৮, উভচর ৬, মাছ ২৭, চিংড়ি ১।
ঝুঁকিতে নেই ৮০২: স্তন্যপায়ী ৩৪, পাখি ৪২৪, সরীসৃপ ৬৩, উভচর ২৭, মাছ ১২২, চিংড়ি ৪৭ ও প্রজাপতি ৮৫।
২৭৮ প্রজাতি সম্বন্ধে সব তথ্য পাওয়া যায়নি; ২৮টি প্রজাতির পর্যালোচনায় আসেনি।

শতকরা হিসেবে হুমকির কাছাকাছি- ৬ শতাংশ, ঝুঁকিপূর্ণ- ৯ শতাংশ, বিপন্ন- ১১ শতাংশ, অতি বিপন্ন- ৩ শতাংশ, বিলুপ্ত- ২ শতাংশ, ঝুঁকিতে নেই- ৫০ শতাংশ।

১৫ বছর পর করা এ তালিকা বিলুপ্তির হুমকি ও ঝুঁকিতে থাকা প্রাণিদের রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ ও বন সচিব।

তিনি বলেন, “২০০০ সালের পর এবার গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদিত হয়েছে। সাতটি গ্রুপের মধ্যে দুঃখজনকভাবে আমরা জানতে পারছি কত প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে পরিকল্পনা নেয়া ও বাস্তবায়নের কাজ সহজ হবে।”

অনুষ্ঠানে আইইউসিএন এর আবাসিক প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রাণিকূলকে রক্ষায় নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন প্রজাতির আবাসস্থল রক্ষা ও অন্যান্য ব্যবহারের প্রতিও অনকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আজকের পর থেকে আমরা আশা করবো-যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীতে আর কোনো প্রজাতিই বিলুপ্ত হবে না।”

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, ইনাম আল হক, ফরিদ আহসান, মনিরুল এইচ খান, অধ্যাপক শাহাদত আলী, মোস্তফা আলী রেজা হাসান ও মনোয়ার হোসেন সাতটি আলাদা গ্রুপের তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা কাজে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রাণি সংরক্ষণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী, প্রধান জাতীয় কারিগিরি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী রেজা খান ও প্রকলল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহাদ মাহবুব চৌধুরী।