আওয়ামী লীগের ইশতেহারে দেশীয় কয়লা নিয়ে পরিকল্পনা নেই

আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে দেশীয় কয়লার বিষয়ে কোনো কিছুই বলা হয়নি। এমনকি কয়লানীতির বিষয়েও কোনো কিছু নেই ইশতেহারে। শুধুমাত্র আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এমনকি গতবারের ইশতেহারেও কয়লার বিষয়ে যা বলা হয়েছিল তার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করেনি আওয়ামী লীগ সরকার।

২০১৪ সালের ইশতেহারে বলা হয়েছে, কয়লাসম্পদের যথাযথ অর্থনৈতিক ব্যবহারের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ ও জ্বালানি সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ১৩০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের ইতোমধ্যে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনী কয়লা আমদানি করা হবে। ২০৩০ সালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদনের হিস্যা হবে প্রায় ৫০ শতাংশ।

অন্যদিকে গত ইশতেহারে বলা হয়েছিল, জাতীয় স্বার্থকে সমুন্বত রেখে কয়লানীতি প্রণয়ন করা হবে। এ যাবত্ প্রাপ্ত কয়লার অর্থনৈতিক ব্যবহার এবং কয়লাভিত্তিক নির্মাণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। নতুন কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।

গত ৫ বছরের ইশতেহারে উল্লেখিত কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। কয়লানীতি প্রণয়ন করা হয়নি। কয়লার খসড়ানীতি পর্যালোচনা করার জন্য কয়েকবার কমিটি করা হয়েছে। তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমান সরকার এসেও প্রথমে কয়লানীতি আবার পর্যালোচনা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু গত ৫ বছরে এ বিষয়ে কোন কিছুই হয়নি।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে এ পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া বড়পুকুরিয়া, খালাশপীর, ফুলবাড়ি, জামালগঞ্জ ও দীঘিপাড়া এই পাঁচটি ক্ষেত্রে মজুদ আছে দুই হাজার ২২১ মিলিয়ন বা ২০২ কোটি টন কয়লা। বড়পুকুরিয়া (দিনাজপুর) ১১৮-৫০৯ মিটার গভীরে প্রমাণিত ৩০৩ টন কয়লা মজুদ আছে। সম্ভাব্য ও প্রমাণিত মজুদ আছে ৩৯০ টন। খালাশপীর (রংপুর) খনিতে ২৫৭ থেকে ৪৮৩ মিটার গভীরে কয়লা আছে। এখানে মোট মজুদ ৬৮৫ টন। ফুলবাড়ি (দিনাজপুর) খনির গভীরতা ১৫০ থেকে ২৪০ মিটার। মজুদ ৫৭২ টন। জামালগঞ্জ (জয়পুরহাট) ৬৪০ থেকে ১১৫৮ মিটার গভীরে মজুদ আছে এক হাজার ৫৩ টন। দীঘিপাড়া (দিনাজপুর) খনির ৩২৮ থেকে ৪০৭ মিটার নিচে আছে মোট ৬০০ টন কয়লা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিমাণ কয়লার তাপ উত্পাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৭ দশমিক ৯০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমান। এ কয়লা দিয়ে দৈনিক ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করে ৫০ বছর পর্যন্ত অনায়াসে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

দেশের একমাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উপর ভিত্তি করে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যদিও বছরের বেশিরভাগ সময় সে কেন্দ্র বিকল থাকায় গড়ে ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ও ঠিকমতো উত্পাদন হয় না। খনির ৮০ ভাগ কয়লা এ কেন্দ্রে ব্যবহার করার কথা থাকলেও বিদ্যুত্ উত্পাদন কম হওয়ায় কয়লা পড়ে থাকছে। এই বাড়তি কয়লা ব্যবহারের জন্য আরো দু’টি ইউনিট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও তা গত ৫ বছরের  আলোর মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবিলা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কয়লার বিকল্প নেই। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও শেষ রক্ষা সম্ভব নয়। ফলে বিদ্যুত্ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করতে হলে দেশীয় কয়লা ব্যবহার করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন জরুরী। ড. ইজাজ বলেন, বিদেশ থেকে তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি আমদানির আগে উচ্চমূল্য ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যের ওঠানামা আমাদের অর্থনীতি সহ্য করতে পারবে কিনা তা ভাবতে হবে।

নিজস্ব কয়লা থাকা সত্ত্বেও সরকার আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। এতে করে বিদ্যুত্ উত্পাদন খরচ বাড়বে। আর বিদ্যুত্ উত্পাদন খরচ বাড়লে সাধারণ গ্রাহককে বাড়তি মূল্য শোধ করতে হবে। প্রতিবছর বিদ্যুতের দামও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।