নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ‘মাগুরছড়া ও টেংরাটিলা দিবস’ উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “অক্সিডেন্টাল কোম্পানির অধীনে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন সিলেটের ১৪ নম্বর ব্লকের সুরমা বেসিনে মাগুড়ছড়ায় গ্যাস কূপ খননকালে ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে তদন্ত কমিটির রক্ষণশীল হিসাবেও গ্যাসসম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৪৫ বিসিএফ বা বিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া পরিবেশ এর যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা দীর্ঘমেয়াদের এবং পুরোটা পরিমাপযোগ্য নয়। ১৯৯৯ সালে ইউনোক্যাল নামে আরেকটি মার্কিন কোম্পানির সাথে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম বিনিময় করে অক্সিডেন্টাল চলে যায়। মাগুড়ছড়ার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোন ফয়সালা না করেই পরবর্তীকালে ইউনোক্যাল-এর ব্যবসা গ্রহণ করেছে আরেকটি মার্কিন কোম্পানি শেভরন। এখন এই কোম্পানির কাছ থেকেই আমাদের পাওনা আদায় করতে হবে।
“টেংরাটিলা নামে পরিচিত ছাতক গ্যাসফিল্ডে ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন পরপর দুটো বিস্ফোরণ ঘটে। কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার জন্যই এই ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। পুরো গ্যাসক্ষেত্র নষ্ট হলে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন মতে তার পরিমাণ ৩০৫.৫ বিসিএফ আর বাপেক্স-নাইকো’র রিপোর্ট মতে ২৬৮ বিসিএফ।
“গড় হিসাব বিবেচনা করলে মাগুড়ছড়া ও ছাতক টেংরাটিলার বিস্ফোরণগুলোতে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত প্রমাণিত সর্বমোট গ্যাস মজুতের মধ্যে কমপক্ষে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ধ্বংস হয়েছে। মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস সম্পদসহ ক্ষতির হিসাবে মার্কিন ও কানাডার কোম্পানির কাছে আমাদের পাওনা দাঁড়ায় কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকা (মাগুরছড়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য শেভরণের নিকট ২০ হাজার কোটি টাকা এবং টেংরাটিলায় ২ দফা ক্ষয়ক্ষতির জন্য নাইকোর নিকট ৩০ হাজার কোটি টাকা)। এই পরিমাণ জ্বালানী খাতে গত পাঁচ বছরের বাজেট বরাদ্দের চাইতে বেশি। আমরা যদি দীর্ঘমেয়াদে জীব-বৈচিত্র বিপর্যয়সহ পরিবেশ ক্ষতি বিবেচনা করি, যদি মানুষের ক্ষতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিবেচনা করি, যদি এই গ্যাস সম্পদের অভাবে বর্তমান বিদ্যুৎ সংকটের ক্ষতির হিসাব যোগ করি তাহলে এর পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে। উল্লেখ্য যে, গত দুই বছরেরও অধিক সময়ে সারাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে, তার চাইতে এই দুটো ক্ষেত্রে যে পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়েছে এর পরিমাণ বেশি।
“এই বিশাল ক্ষতি নিয়ে কোন সরকারকে কখনো কথা বলতে শোনা যায়নি, মার্কিন কোম্পানি শেভরন ও কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে কোনো সরকারই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উল্টো তাদেরকে নানারকম ছাড়, ভর্তুকি ও সুবিধা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে একটা হাস্যকর রকম কম অংকের টাকা কখনো কখনো বলা হচ্ছে। আমরা ক্ষতিপূরণের যথাযথ অর্থ আদায় করে তা জ্বালানী খাতে সক্ষমতা বিকাশসহ দেশের উন্নয়নে তা ব্যবহার করতে জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে এই দাবিতে ১৪ জুন সারাদেশব্যাপী ‘মাগুড়ছড়া-টেংরাটিলা দিবস’ পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”