নতুন বিদ্যুৎ আইনের খসড়া অনুমোদন

বিদ্যুৎ স্থাপনায় নাশকতা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে নতুন বিদ্যুৎ আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়া বিদ্যুৎ আইন- ২০১৬ অনুমোদন দেয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুৎ স্থাপনায় অনিষ্ট সাধনের জন্য কেউ বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, বিদ্যুৎ লাইন, খুঁটি বা অন্য যন্ত্রপাতি নাশকতার মাধ্যমে ভেঙে ফেললে বা ধ্বংস করলে অনধিক সাত থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এর আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রে নাশকতার ঘটনাগুলো এ আইনের আওতায় আসবে কি না সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা হয়নি জানিয়ে শফিউল বলেন, আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইংরেজিতে করা আইনগুলোকে বাংলায় করার বিধান রয়েছে। সেই আলোকে ১৯১০ সালের বিদ্যুৎ আইনকে হালনাগাদ করে নতুন এ আইন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৯১০ সালে বিদ্যুৎ যে অবস্থায় ছিল ২০১৬ সালে এসে সেই অবস্থায় নেই। মূল আইনকে ভিত্তি ধরেই এ আইন করা হয়েছে। আগের আইনের কলেবর বাড়ানো হয়েছে। কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, কিছু বিষয় বাদও দেয়া হয়েছে।

নতুন আইনে প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া-নেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করতে এই পদ সৃষ্টি করা হবে।
তিনি জানান, সারা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সমন্বিত আকারে পরিচালনায় সরকার ইনডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর (আইএসও) প্রতিষ্ঠা করবে। সারা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এর আওতায় আসবে। এ অপারেটর বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রবাহ তদারকি, শিডিউলিং ও লোড সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করবে।”

বিদ্যুৎ চুরি চিহ্নিত করা, বিদ্যুৎ চুরি প্রতিরোধ ও অপচয় বন্ধে বিভিন্ন এজেন্সির সমন্বয়ে সরকার বিদ্যুৎ গোয়েন্দা সেলও গঠন করতে পারবে এ আইন পাস হলে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত (আর্থিং) করতে পারবে না।

‘অবৈধভাবে কেউ বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে তিনি বিদ্যুৎ চুরি করেছেন বলে গণ্য হবে’ জানিয়ে শফিউল বলেন, “এজন্য অনধিক তিন বছর কারাদণ্ড অথবা চুরি করা বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ৫০ হাজার টাকা (যা পরিমাণে বেশি হয়) জরিমানা করা হবে।”

আগের আইনে এ অপরাধের সাজা ছিল এক থেকে তিন বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা।

শিল্প বা বাণিজ্যিক কাজে অবৈধভাবে বিদ্যুত ব্যবহারের শাস্তি দ্বিগুণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনে এই অপরাধের জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা চুরি করা বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ বা এক লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে।
পুরনো আইনে বিদ্যুৎ লাইন চুরির জন্য পাঁচ বছরের জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। তা বাড়িয়ে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়ায়।

বিদ্যুতের অনুচিত ব্যবহারের জন্য অনধিক তিন বছর জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে নতুন আইন পাস হলে।

শফিউল বলেন, নিজের বৈধ মিটার থেকে লিখিত অনুমোদন ছাড়া কাউকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে নতুন আইনে তাকে অনধিক দুই বছর সাজা বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। যিনি ওই অবৈধ সংযোগ নেবেন, তিনিও ওই শাস্তির আওতায় পড়বেন।

এ অপরাধের জন্য আগের আইনে তিন বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যেত বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।