রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের দাবি সুজনের
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ এবং সুন্দরবন এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। বিবৃতিতে বলা হয়, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশের সচেতন নাগরিক, পরিবেশবাদী, দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সব ধরনের যুক্তি, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকে উপেক্ষা করে সরকার বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থানটি সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটারেরও কম। বাফার জোন ধরলে যা নয় কিলোমিটারেরও কম। অথচ ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রণীত পরিবেশ সমীক্ষা গাইডলাইন ম্যানুয়াল: ২০১২ অনুযায়ী, বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও জাতীয় উদ্যান এলাকার ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা যায় না। এছাড়া প্রকল্পের জন্য বিদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নদীপথে প্রতিবছর ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা আসবে। পরিবহনকালে এই কয়লার গুঁড়ো বা ক্ষুদ্র কণা উড়ে পানিতে মিশবে। ফলে পানি দূষিত হবে। যার প্রভাব জলজ প্রাণী ও পরিবেশের ওপর গিয়ে পড়বে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড নির্গত হবে। যা সহনশীল পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি এবং এর মারাত্মক প্রভাব বনাঞ্চল ও প্রাণিজগৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এখানে যে সুপারক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের মতে, তা মাত্র দশ শতাংশ ক্ষতি কমাতে পারে। এছাড়াও ইআইএ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৭৫ মিটার উঁচু চিমনি থেকে নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্যের তাপমাত্রা হবে ১২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস; বাতাসের তাপমাত্রার ওপর এর প্রভাব প্রাণী ও পরিবেশের ক্ষতি করবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে বছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন ফ্লাইএ্যাশ ও দুই লাখ টন বটম অ্যাশ উৎপন্ন হবে। শোনা যায় যে, এই ছাই সিমেন্ট কোমপানিগুলোকে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু তার আগেই এই ছাই বাতাসে উড়ে গিয়ে গাছপালা ও পশুপাখির ক্ষতি করবে। ইআইএ রিপোর্ট অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য প্রতিঘণ্টায় পশুর নদী থেকে নয় হাজার ১৫০ ঘন মিটার পানি প্রত্যাহার করা হবে। এবং ব্যবহারের পর পাঁচ হাজার ১৫০ ঘনমিটার পানি নদীতে ফেরত যাবে। এতে পানিপ্রবাহ কমতে থাকবে এবং পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাবে। যার ক্ষতিকর প্রভাব গিয়ে পড়বে জলজপ্রাণীর ওপর। এছাড়া জাহাজ চলাচল এবং টারবাইন, কম্প্রেসর ও পামপ ব্যবহারের ফলে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, তা হবে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী। এতে শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনই ধ্বংস হবে না। বিপর্যস্ত হবে জীব-বৈচিত্র্য, দূষিত হবে নদ-নদী এবং কর্ম হারাবে লাখ লাখ প্রান্তিক মানুষ। বিবৃতিতে বলা হয়, তেল-গ্যাস-খনিজ সমপদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটিসহ ৫৩টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের লক্ষ্যে যে আন্দোলন করছে, তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে সুজন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।