আন্তর্জাতিক দরে ভারত থেকে তেল আমদানি
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আসামের নুমালীগড় থেকে তেল আনা হলেও বাজারমূল্য নির্ধারন হবে আন্তর্জাতিক দরে।
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ কথা জানান। ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে বিভিন্ন বিষয় অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নসরুল হামিদ বলেন, ভারত সফর ফলপ্রসু হয়েছে। আসামের নুমালীগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। নুমালিগড়ে একটি তেল শোধনাগার আছে। সেখান থেকে তেল শোধন করে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ ও খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। এই পাইপলাইন নির্মাণ করবে নুমালীগড় রিফাইনারি। আমরা শুধু তেল কিনবো। তবে এক্ষেত্রে রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ নিজেরা টাকা দিতে পারে অথবা ভারতে বাংলাদেশের যে এক মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন আছে সেখান থেকেও এই অর্থ ব্যয় হতে পারে। তিনি জানান, তেলের বাজারমূল্য নির্ধারন হবে আন্তর্জাতিক দরে। এর উপর আমরা একটা প্রিমিয়াম দেবো। সেই প্রিমিয়ামটা এখনো চুড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে চুক্তি করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপাতত ট্রেনেই তেল আমদানি করা হবে। আগেও এভাবে তেল আনা হয়েছে। আমরা দাম একটু কম দিতে চেয়েছি। ভারত সেটা বিবেচনার কথা বলেছে। নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে রংপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে তেল পরিবহনে ব্যারেল প্রতি আট ডলার খরচ পড়ে। ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনতে পারলে এই আট ডলার বেঁচে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারতের পূর্বাংশে গ্যাসের সংকট আছে। সেখানে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কিছুদিন আগেও গ্যাস দেয়া হয়েছে। আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যেন ভারতের ওই অংশে এলপিজির ব্যবসা করতে পারে। এলপিজিতে ভারত র্ভতুকি দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ভর্তুকি কিভাবে দেয়া হবে তা চিন্তা করছে ভারত। এছাড়া ভারত বাংলাদেশে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাস দেবে বাংলাদেশকে। তিনি জানান, ভারতে হলদিয়ায় যে পাইপলাইন করা হচ্ছে তা বাংলাদেশের যশোরের মধ্য দিয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার বিষয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। তাহলে আমরা খুলনাসহ ওই অঞ্চলে গ্যাস দিতে পারবো। পাশাপাশি ভারতও বাংলাদেশের খুলনা হয়ে রংপুর পর্যন্ত যে সঞ্চালন লাইন আছে সেটি ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা হুইলিং চার্জও দিতে চায়। ভারত সেই সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে শিলিগুড়িসহ ওই অঞ্চলে গ্যাস নিতে চায়। এতে দুইদেশেরই লাভ হবে। এছাড়া ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিবহন করার বিষয়টিও চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চেয়েছে।
এদিকে ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ভূমি ব্যবহার করতে হবে। নসরুল হামিদ জানান, ভুমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত সম্মত হয়েছে। ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এছাড়া ভারত বাংলাদেশের কয়লা নিতে আগ্রহী। তারা বলেছে, যদি আমরা কয়লা উত্তোলন করি, তবে তারা সেই কয়লা কিনবে।
এদিকে বাংলাদেশের টুঙ্গীপাড়া পৌরসভায় এলইডি বাতির একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ভারতের এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড (ইইএসএল)। এজন্য ইইএসএল এর সঙ্গে বাংলাদেশের টেকসই ও নবায়নযােগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে। প্রতিমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এ চুক্তি সাক্ষরিত হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্প সফল হলে বাংলাদেশের সব পৌরসভায় এই প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।