সিস্টেম লস কমাতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি
বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমাতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। বিশেষ করে আরইবির বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করাই এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া সঞ্চালন লাইনেরও উন্নয়ন করা হবে এই ঋণের টাকায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ইআরডি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত সংস্থাটির ভার প্রাপ্ত প্রধান ক্রিস্টিন ই কাইমস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহজ শর্তে এ ঋন দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর সুদের হার শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে বাংলাদেশকে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন না বাড়ার কারণে পুরনো লাইনে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বছর বছর বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত্ নষ্ট হচ্ছে সিস্টেম লসের কারণে। এ অবস্থায় বিদ্যুত্ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ক্রিস্টিন ই কাইমস বলেন, গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষ বর্তমানে বিদ্যুত্ সুবিধা ভোগ করছেন। এ ছাড়া ১৩ মিলিয়ন গ্রামীন পরিবার বিদ্যুত্ সুবিধার বাইরে রয়েছে। বিদ্যুত্ সুবিধা বাড়লে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। সেইসঙ্গে মানুষের আয় বাড়ে, ব্যয় ও শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পায়। বিদ্যুত্ বিতরন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো গেলে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে সেইসঙ্গে দারিদ্রও কমতে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আরইবির ৬ লাখ ৪১ হাজার ৫৬৫টি ট্রান্সফরমারের মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩১১টি ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড। এসব ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারগুলোর কারণে বিদ্যুত্ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ওভারলোডেড (ক্ষমতার চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়া) হওয়ার কারণে এসব ট্রান্সফরমার জ্বলে যাওয়া, লাইন পুড়ে ও ছিঁড়ে যাওয়াসহ উপকেন্দ্র বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।
বর্তমানে দুই লাখ ৪৮ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইনের মাধ্যমে নয় দশমিক ৭০ মিলিয়ন গ্রাহককে বিদ্যুত্ সরবরাহ করছে আরইবি। দেশের সব থেকে বড় এই বিদ্যুত্ বিতরণ সংস্থায় ৭১টি সমিতি রয়েছে। দীর্ঘ দিনের পুরনো লাইন, সাবস্টেশন এবং ওয়ারলোডেড ট্রান্সফরমারের বিতরণ ব্যবস্থায় প্রায়ই ব্যঘাত সৃষ্টি করছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ থাকার পরও বিতরণ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় আরইবির গ্রাহকরা লো-ভোল্টেজ এবং ঘন ঘন বিদ্যুত্ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছেন। এ কারণে সরকার এখন পল্ল¬ী এলাকার বিদ্যুত্ সরবরাহ উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ছয় হাজার ১৫০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৩৩ কেভি (৪৭৭ এমসিএম) নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে দুই হাজার ২০৭ কিলোমিটার, একই ক্ষমতার ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ করা হবে ১০৬ কিলোমিটার, ৩৩ কেভি (৬৩৬ এমসিএম) লাইন নির্মাণ হবে ৩৪০ কিলোমিটার, ৩৩ কেভি লাইন আপগ্রেডেশন হবে ৮৬৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া দুই হাজার ৬৩৪ কিলোমিটার ১১ কেভি লাইন নির্মাণ এবং পুনর্বাসন প্রকল্পে রয়েছে। প্রকল্পর অধীনে ১১০টি নতুন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় পিজিসিবি নতুন ২৩০/১৩২ কেভি ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে। এর আওতায় ১৩২/৩৩ কেভি ৮৪ কিলোমিটার আরও একটি নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও অধিক গ্রাহক সংযোগ দেয়ার লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অর্ন্তভুক্ত ৩৯টি পল্ল¬ী বিদ্যুত্ সমিতির ভৌগলিক এলাকায় বিদ্যমান বিদ্যুত্ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতকরণ ও ক্ষমতাবর্ধণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।