গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল দিচ্ছে গ্রাহক

গ্যাসের গ্রাহকরা প্রতিমাসে যে টাকা শোধ করে সেই পরিমান  গ্যাস পাচ্ছেন না। বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন গ্রাহক। আর এতে গ্যাস বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা অর্জন করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দেশে বিতরণ করা মোট গ্যাসের ১৩ শতাংশ আবাসিকে, ১৭ শতাংশ শিল্পে, ছয় শতাংশ সার কারখানায় এবং সিএনজিতে সাড়ে পাঁচ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪১ শতাংশ এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৭ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত দুই ভাবে গ্রাহক বঞ্চনার ঘটনা ঘটছে। এক. লাইনে চাপ কম থাকায় শিল্প-বাণিজ্য খাতের গ্রাহকরা তাদের জন্য বরাদ্দ থাকা চাপ অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন না। পুরনো ভলিউমেট্রিক মিটারের কারণে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান কতটুকু কম গ্যাস পাচ্ছেন তা ধরা পড়ে না। কিন্তু গ্যাস কোম্পানিগুলো বরাদ্দ থাকা চাপ অনুযায়ী গ্যাস বিতরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে বিল জারি করে। দুই. আবাসিক গ্রাহকেরা যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করবেন বলে হিসাব করে কোম্পানিগুলো দাম নির্ধারণ করেছে, আসলে আবাসিক গ্রাহকরা তার চেয়ে অনেক কম গ্যাস ব্যবহার করেন। যেমন, দুই চুলার একজন গ্রাহক প্রতি মাসে ৯২ ঘনফুট (সিএফটি) গ্যাস ব্যবহার করবেন এমন ধারণা করে বিল নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুই চুলায় গড়ে ৪২ সিএফটি গ্যাস ব্যবহার হয়। ফলে তিতাসের এমনিতেই দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হয়ে যায়। আবাসিকে যে সকল গ্রাহকরা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন তারা যথাযথ বিল দিচ্ছেন। আর এই বিলের পরিমান নির্ধারিত বিল দেয়া গ্রাহকের চেয়ে অনেক কম।

পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে প্রায় ২০ লাখ আবাসিক সংযোগ রয়েছে। আবাসিক গ্রাহকের অন্তত ৭০ ভাগ তাদের বেঁধে দেয়া সীমার চেয়ে কম গ্যাস ব্যবহার করেন।

বিতরণ কোম্পানিগুলো পেট্রোবাংলার কাছ থেকে যে পরিমাণ গ্যাস কিনছে মাস বা বছর শেষে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ গ্যাস বিক্রির বিল হিসাবে জমা হচ্ছে। এই বাড়তি বিলের প্রায় পুরোটাই এভাবে হচ্ছে। এরমধ্যে চলে যাচ্ছে অবৈধ গ্যাসও। অবৈধ গ্যাস ব্যবহার হলেও তা আর হিসাবের খাতায় থাকছে না।

এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান বলেন, আবাসিকের বেশ কিছু গ্রাহক সংযোগ নিলেও তেমন ব্যবহার করে না। আবার শিল্পের গ্রাহকদের যে চাপ অনুযায়ী গ্যাসবিল করা হয় দিনে তিন-চার ঘন্টা তার চেয়ে কম চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু একই চাপের মাপকাঠি ধরে ২৪ ঘন্টার বিল করা হয়। এ জন্যই এ সিস্টেম গেইন হচ্ছে। বড় গ্রাহকদের ক্ষেত্রে কম্পিউটারভিত্তিক মিটার স্থাপন করা হয়েছে। তাই তারা যে চাপ অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন সে অনুযায়ী বিল দিচ্ছেন।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর বার্ষিক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এক দশমিক ৮২ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি চার শতাংশ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ, কর্ণফুলী চার দশমিক ২৯ শতাংশ এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির সিস্টেম গেইন ছিল পাঁচ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরেও এ ধারা অব্যাহত আছে। এর আগের কয়েক বছরও কোম্পানিগুলো পদ্ধতিগত লোকসান বা সিস্টেম লস না করলেও আয় বেড়েছে করেছে।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সিস্টেম গেইন নামক এই গ্রাহক বঞ্চনা ও প্রতারণার বিষয়ে বিইআরসিসহ সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কাউকে আন্তরিক বলেও মনে হচ্ছে না। অবৈধ সংযোগ ও চুরি বন্ধের চেয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারেই যেন সংশ্লিষ্টদের বেশি আগ্রহ। অথচ এ মূহুর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতাই নেই।