আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম একদিনে প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম একদিনে প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর বাজার আদর্শ ব্রেন্টের এটিই সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ নতুন মাত্রা পাওয়ার আশঙ্কায় সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বাজারে। এতে শুক্রবার অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে জ্বালানিটির। খবর রয়টার্স।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ই অক্টোবর হামাসের আক্রমণের মধ্য দিয়ে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়। সপ্তাহব্যাপী আকাশপথে ব্যাপক বোমা হামলা শেষে ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করতে শুক্রবার স্থল অভিযানের ঘোষণা দেয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার আলটিমেটাম দেয়। ফলে যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী অঞ্চল। এতে যুদ্ধের অস্থিরতা বৃহদাকারে ছড়িয়ে গেলে জ্বালানিটির সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে। এমন আশঙ্কায় আমদানি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আইসিই ফিউচার্সে শুক্রবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বা ব্যারেলে ৪ ডলার ৮৯ সেন্ট বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য উঠেছে ৯০ ডলার ৮৯ সেন্টে। আর নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বা ব্যারেলে ৪ দশমিক ৭৮ সেন্ট। ব্যারেলপ্রতি মূল্য স্থির হয়েছে ৮৭ ডলার ৬৯ সেন্টে।
উভয় বাজার আদর্শেই এপ্রিলের পর দৈনিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ দাম বাড়ার রেকর্ড ছুঁয়েছে। ব্রেন্টের সাপ্তাহিক দাম ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। আর ডব্লিউটিআইয়ের সাপ্তাহিক দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
ইসরায়েল বা ফিলিস্তিন তেল-গ্যাস সরবরাহকারী দেশ নয়। তবে বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধরত দেশ দুটির পার্শ্ববর্তী দেশগুলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জ্বালানি সরবরাহকারী। বিশেষ করে ইরান বা সৌদি আরব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে সরবরাহ চেইনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজির বরাত দিয়ে ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে পৌঁছতে পারে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রথমবারের মতো হামলা চালাতে পারায় ইরান হামাসের প্রশংসা করেছে। লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ইসরায়েল সীমান্তে আক্রমণ শুরু করেছে। সংগঠনটি তেহরান সমর্থিত হওয়ায় যুদ্ধ আরো বিস্তৃতি লাভ করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান শুক্রবার হিজবুল্লাহর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর এ উদ্বেগ আরো জোরালো হয়ে উঠেছে।
এমন অবস্থায় ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়া যুক্তরাষ্ট্র আবার ইরানের জ্বালানি তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করতে পারে। এতে বৈশ্বিক বাজারে ব্যাপক সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
গত বছর ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাঙ্কারগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে।
এদিকে বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল আমদানিকারক চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে। এতে জ্বালানিটির চাহিদা বাড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকও চলতি সপ্তাহে দাম বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।
: বণিক বার্তা থেকে