ঋণ শোধ নয়, লাভ চায় অর্থ মন্ত্রণালয়

ঋণ শোধ নয়, লাভের টাকা চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জ্বালানি তেল বিক্রি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) যে অর্থ জমেছে, তার অর্ধেক অর্থ মন্ত্রণালয়ে দিতে বলা হয়েছে। বিপিসি এই অর্থ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিপিসির ফিন্যান্স সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির বৈঠকে এই অর্থ নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তেল বিক্রিতে গত অর্থবছর প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। এই টাকার মধ্যে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে দিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছেন, বর্তমানে জ্বালানি তেল খাতে বিপিসি তথা সরকারের যে দায়, তা মেটানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা বাঞ্ছনীয়। তবে প্রতিমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী লাভের টাকা দিয়ে কোনো ঋণ শোধ হচ্ছে না। শুধু লাভের অংশ হিসেবেই ওই অর্থ নেওয়া হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে তেল আমদানি করতে আর ভর্তুকি দেওয়া হয় না। সরকার বিপিসিকে ঋণ দেয়। ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার অর্থ বিভাগের মাধ্যমে ৩ ও ৫ শতাংশ সুদে ২৬ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) বিভিন্ন স্থানে দেনা আছে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সব মিলে তেল বিক্রিতে বিপিসির দেনা আছে ৩১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিপিসিকে সরকার ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
সম্প্রতি বিপিসির অপারেশন ও ফিন্যান্স-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির বৈঠকে সরকারের পাওনা পরিশোধে বিপিসিকে একটি পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে জানানো হয়, গত চার বছরে বিপিসিকে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে বিপিসিকে ঋণ হিসেবে চার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে আট হাজার ৫৫০ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৫৮০ কোটি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সাত হাজার ৩৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা এনার্জি বাংলাকে বলেন, বিপিসির অনেক দেনা আছে। সেই দেনা থেকে মুক্ত হতে চাই। তবে সরকার যেটা ভালো মনে করবে, সেটাই করবে। টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তেল বিক্রির লাভের আড়াই হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। এখন হিসাব চলছে, সেই টাকা দেওয়ার। বিপিসি সরকারের নির্দেশ পালন করবে শুধু। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান যে অবস্থায় আছে সেভাবেই থাকবে। তবে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম না বাড়লে এবং স্থানীয় বাজারে তেলের দাম না কমালে_ অর্থাৎ বর্তমান অবস্থানে থাকলে চলতি অর্থবছর জ্বালানি তেল বিক্রিতে ছয় হাজার কোটি টাকারও বেশি লাভ হবে। বর্তমান ধারাবাহিকতায় লাভ অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরে বিপিসির আর কোনো দেনা থাকার কথা নয়। তেল বিক্রি করে লাভ করলেও এই ঋণের অর্থ শোধ করা হচ্ছে না।
অথচ জ্বালানি তেল আমদানি করতে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিদেশি কয়েকটি ব্যাংক থেকে নিয়মিত ঋণ নেয় বিপিসি। এই ঋণের অর্থ নিয়মিত শোধ করা হয়। এ জন্য বিদেশি কোনো ব্যাংকের কাছে বিপিসির কোনো দেনা নেই।
নসরুল হামিদ সম্প্রতি জানান, অতীতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও জনগণের কথা চিন্তা করে সরকার স্থানীয় বাজারে সে অনুপাতে দাম বাড়ায়নি। প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যে কোনো সময় বাড়তে পারে।
প্রতি লিটার ডিজেল আমদানিতে খরচ হয় ৫০ টাকা ৬৭ পয়সা। দেশে খুচরা বিক্রি করা হয় ৬৮ টাকা। প্রতি লিটারে লাভ ১৭ টাকা ৩৩ পয়সা। কেরোসিন আমদানিতে খরচ ৫১ টাকা ০৪ পয়সা। বিক্রি করা হয় ৬৮ টাকা। লাভ হয় ১৬ টাকা ৯৬ পয়সা। অকটেন আমদানিতে লিটারপ্রতি খরচ ৬৮ টাকা ৬৯ পয়সা, বিক্রি করা হয় ৯৯ টাকায়। লাভ ৩০ টাকা ৩১ পয়সা। ফার্নেস অয়েল ৩৮ টাকা ৪৪ পয়সা দিয়ে এনে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে লিটারপ্রতি লাভ হয় ২১ টাকা ৫৬ পয়সা। জেট-১ আমদানিতে খরচ ৫০ টাকা ৬১ পয়সা আর বিক্রি করা হয় ৬৭ টাকায়, লিটারপ্রতি লাভ হয় ১৬ টাকা ৩৯ পয়সা।