এবার ব্যাকটেরিয়া থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি!

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের কৃত্রিম জীববিজ্ঞান গবেষণাগারে উৎপাদিত ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়াব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা গ্যাস (প্রোপেন) উৎপাদনের একটি পদ্ধতির খোঁজ পেয়েছেন যুক্তরাজ্য ও ফিনল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানী। এই ব্যাকটেরিয়া মোটেও অপরিচিত নয়। নাম ইশারিশিয়া কোলাই বা সংক্ষেপে ই. কোলাই। মানুষের অন্ত্রেই এদের বসবাস। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, নতুন এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির একটি বিকল্প পাওয়া যাবে এবং অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণেরও সুযোগ তৈরি হবে।
ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষক প্যাট্রিক জোন্স ওই উদ্ভাবনে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁরা খুব সামান্য পরিমাণ জ্বালানি উৎপাদন করতে পারলেও তা একটি ইঞ্জিনে সরাসরি ব্যবহারের জন্য একেবারে প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। প্রক্রিয়াটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই এ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি উৎপাদনের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের উৎস হিসেবে এখন পর্যন্ত কেবল জীবাশ্ম জ্বালানিই ব্যবহার করা হয়ে আসছে। হাইড্রোকার্বনের যৌগ প্রোপেন হচ্ছে একটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি। কারণ, এতে কার্বন উপাদানের পরিমাণ তুলনামূলক কম। বিশ্ববাজারে এটির চাহিদা অনেক। তাই এ মুহূর্তে প্রোপেন উৎপাদনের নতুন কৌশল বা পদ্ধতি উদ্ভাবনের ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে বেশ আকর্ষণীয়। বর্তমানে এটি তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মোটরগাড়ির জ্বালানি থেকে শুরু করে রান্নার চুলা এবং শীতপ্রধান দেশে ঘর উত্তপ্ত রাখার ব্যবস্থায় (হিটিং) এলপি গ্যাসের প্রচলন রয়েছে অনেক দিন ধরেই। প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের সময় এবং পেট্রোল বা জ্বালানি তেল পরিশোধনের সময় উপজাত (বাই-প্রোডাক্ট) হিসেবে পাওয়া যায় এই এলপি গ্যাস। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেল—দুটিই জীবাশ্ম জ্বালানি এবং তা এক দিন ফুরিয়ে যাবে। তাই ভবিষ্যৎ বিবেচনায় রেখে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প অনুসন্ধানের বিষয়টিকে বিজ্ঞানীরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ই. কোলাই থেকে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদনের নতুন পদ্ধতিটি এ ক্ষেত্রে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। জোন্স বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফুয়েল হচ্ছে সীমিত সম্পদ। তাই জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে এখন অন্য কোনো উৎসের কথা ভাবতে হবে। কম খরচে উৎপাদনযোগ্য এবং নবায়নের উপযোগী জ্বালানি তৈরি করাটা এখন বিজ্ঞানীদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এ মুহূর্তে শৈবাল বা জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে জৈব জ্বালানি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এই পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে সুবিধাজনক নয়। কারণ, বিপুল পরিমাণ শৈবাল চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে অনেক জ্বালানি ও অর্থ খরচ করতে হবে।
জোন্স ও তাঁর সহযোগীদের গবেষণাটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, তাঁরা প্রোপেনকে বেছে নিয়েছেন এ জন্য যে এটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম জ্বালানি খরচ করেই উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া এটি সহজে ব্যবহারের জন্য বর্তমান অবকাঠামোর উপযোগী হবে।
জোন্সের সহযোগীদের মধ্যে ফিনল্যান্ডের টুর্কু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাও ছিলেন। তাঁরা একটি জৈব প্রক্রিয়ায় ফ্যাটি অ্যাসিডকে কোষ ঝিল্লিতে পরিণত করায় বাধা দেওয়ার জন্য ই. কোলাই ব্যবহার করেন। তাঁরা এ ক্ষেত্রে কয়েকটি উৎসেচক বা এনজাইম ব্যবহার করে ফ্যাটি অ্যাসিডগুলোকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার ব্যবস্থা করেন। ফলে কোষ ঝিল্লির পরিবর্তে ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়াগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রোপেন উৎপাদন করে।
জোন্স স্বীকার করেন, বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য যে বিপুল পরিমাণ প্রোপেন প্রয়োজন, সেই তুলনায় ই. কোলাইয়ের মাধমে তাঁদের উৎপাদিত গাসের পরিমাণ নিতান্তই সামান্য। তাই এখন তাঁরা ওই উৎপাদন প্রক্রিয়াটিকে নতুন ও কার্যকর রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ মুহূর্তে তাঁরা জানেন না, ঠিক কীভাবে জ্বালানির অণুগুলো তৈরি হচ্ছে। তাই পদ্ধতিটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরে পদ্ধতিটিকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হবে। রয়টার্স।
(অনুবাদ, প্রথম আলোর সৌজন্যে)