এবার খনি থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন পাথর উধাও
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উধাও হওয়ার পর এবার মধ্যপাড়া খনি থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন মূল্যবান পাথরের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ পাথরের মধ্যে রয়েছে মূল্যবান অ্যামেলগেমেট গ্রানাইট পাথর ও শিলা। যার মূল্য ৫৬ কোটি টাকা।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) থেকে এ পাথর উধাওয়ের অভিযোগ উঠেছে। ২৯৯শে জুলাই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বোর্ডসভায় কোম্পানির মহাব্যবস্থাপকের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
কোম্পানির চেয়ারম্যান ও জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন জানান, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ‘পুরো পাথর মাটির নিচে দেবে গেছে’ বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গছে। একই সঙ্গে পুরো অর্থ ও পাথরের সংখ্যা কোম্পানির মূল হিসাব থেকে ‘অবলোপন’ করার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু পর্ষদ সভায় এ সুপারিশ অনুমোদন হয়নি।
বোর্ডসভায় এ ঘটনায় অধিকতর তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানির উৎপাদিত পাথর, বিক্রি ও মজুদের তথ্য উদ্ঘাটনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কোম্পানির হিসাবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর মজুদ থাকার কথা, কিন্তু বাস্তবে এ পরিমাণ পাথর নেই। এ কারণে এ পাথরকে কোম্পানির মূল হিসাব থেকে বাদ দিয়ে কাগজে-কলমে ব্যালেন্স শিট মেলানোর জন্য এর দাম অবলোপন করতে বলা হয়েছে।
কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) মো. আবু তালেব ফরাজীকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের গঠিত ওই কমিটির অন্য সদস্য হলেন- উপ-মহাব্যবস্থাপক (এমঅ্যান্ডটিএস) মতিয়ার রহমান, ব্যবস্থাপক (অর্থ) আমিনুল ইসলাম মণ্ডল, ব্যবস্থাপক (এইচআরডি) আসাদুজ্জামান, ব্যবস্থাপক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) কামরুজ্জামান হিরু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুধু ৫৬ হাজার ৫১৯ টন অ্যামেলগেমেট গ্রানাইট পাথর উৎপাদন ও বিক্রি করা হয়। যা ওই অর্থবছরের হিসাব বইতে বিক্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু উৎপাদন ও মজুদ হিসাবে তা দেখানো হয়নি।
খনি থেকে শিলা উত্তোলন শুরু হয় ২০০৬-০৭ অর্থবছর। ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত অপারেশন বিভাগের শিলা উত্তোলন রেকর্ড ও অ্যাকাউন্ট বুকের রেকর্ড অনুযায়ী শিলা উত্তোলনের পার্থক্য ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৯ টন।
এর মধ্যে ২০০৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ২ লাখ ২৭ হাজার ২৩৩ টন আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৯৬ টন। যার পুরোটাই মাটির নিচে দেবে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৬ হাজার ৮৭ টন পাথরকে সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এ সময়ে খনি থেকে পাথর উৎপাদিত হয়েছিল ১২ লাখ ৭২ হাজার ৫৩৭ টন। সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয় মোট উৎপাদিত পাথরের ২.০৫ শতাংশ। খনি থেকে মোট উত্তোলিত শিলা ও পাথরের মধ্যে বিক্রি অযোগ্য শিলার পরিমাণ, ফিনিশড প্রোডাক্টের অপচয়, হ্যান্ডেলিং লোকসান ইত্যাদির যে পরিমাপ করা হয়েছে তা অনুমাননির্ভর। এ কারণে উৎপাদন বিভাগ থেকে দেয়া হিসাব, বিক্রয় ও সরবরাহের হিসাব অ্যাকাউন্ট বুকের রেকর্ডে গরমিল হয়েছে। যার পরিমাণ ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৬.৮৯ টন। এ শিলার দাম ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৮ টাকা।